আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘সরকার ড. ইউনূসকে হয়রানির জন্য কিছু করছে না। সরকার কোনও মিথ্যা মামলাও করেনি। শ্রম ও অধিদফতরের তদন্তে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রমাণ হওয়ায় শ্রমিকদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে মামলা করেছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয় নিজ দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘হয়রানি করা হচ্ছে’ মর্মে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যে বিবৃতি অথবা মতামত প্রকাশ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ করলে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। অনেকদিন বিচারহীনতায় ভুগেছে দেশ। শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ বিচারহীনতার সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং করে যাবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘২০১৭ সালে শ্রমিকরা অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে ও ন্যায্য প্রাপ্যতা দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে শতাধিক মামলা করেন। পরে নায্য প্রাপ্যতা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় তারা এই মামলা প্রত্যাহার করে। কিন্তু শ্রম অধিদফতরের কাছে মনে হয় যে শ্রমিকরা যে অভিযোগ করেছেন, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানে শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেই কারণে তারা তদন্ত করে এবং শ্রম দফতরের তদন্তে শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার একাধিক ঘটনা উঠে আসে। এজন্য ড. ইউনূসকে সতর্ক করা হয় এবং ওই লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে সেজন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি পরামর্শ গ্রহণ করেননি। এরপর শ্রম দফতর মামলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলার বিষয়ে ড. ইউনূস হাইকোর্টে এবং আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন যে, এই মামলা চলতে পারে না। দুই জায়গা থেকেই আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মামলা পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছেন। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে বলা হচ্ছে, সরকার তাকে হ্যারেজ করছে, শ্রমিকরা মামলা করেনি; এগুলো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস ২০৫ ধারায় আবেদন করে মামলার শুনানিতে হাজির না থাকার বিষয়ে সময় চেয়েছেন। তিনি যতবার আবেদন করেছেন আদালত তাকে ততবার সময় দিয়েছেন। আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছেন। একইভাবে ৩৪২ ধারায় আসামির জবানবন্দীর সুযোগ রয়েছে। ড. ইউনূস জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে যেসব ডকুমেন্ট আসে, তার ভিত্তিতে এই ধারায় আসামি দোষী কি, দোষী নন; তা বলার সুযোগ পায়।’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রায়াল ইজ ওভার। এখন বিদেশ থেকে দেখতে চাওয়ার মানে কী? আর তারা কী দেখতে চায় সে বিষয়টিও যদি তারা জানায়, তাহলে আমরাও ভেবে দেখবো।’
শ্রম আদালতের হাজার হাজার মামলা খুবই ধীর গতিতে নিষ্পত্তি হচ্ছে। তার মধ্যে ড. ইউনূসের মামলাটি দ্রুত গতিতে হলো। এটি বিশেষ কোনও কারণে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এক একটি মামলার ধরন একেক রকম। সমাজের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কোনও কোনও মামলা নিষ্পত্তি হয়। যেমন ফেনীর ধর্ষণ মামলা, সিলেটের শিশু হত্যা মামলাসহ আরও অনেক মামলা রয়েছে, যেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে। এটিও সেই বিবেচনায় দ্রুত হচ্ছে বলে মনে করি।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কর ফাঁকির বিষয়ে ড. ইউনূস আপিল বিভাগ পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তিনি হেরেছেন এবং ১২ কোটি টাকা কর পরিশোধ করেছেন। কেউ ফাঁকি না দিলে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করে না।’
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞ বিচারিক আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে শাস্তি দিয়েছেন। এখন আপিল করার সুযোগ আছে।’ শ্রম অধিকার বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনিই বলেন, ‘আমাকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। তারাও বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে কাজ করছে। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি ।’