বাগেরহাটের ফকিরহাটে ক্যান্সার প্রতিরোধক ব্রকলি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন উপজেলার আট্টাকা গ্রামের কৃষক শেখ জাহাঙ্গির হোসেন। তিনি এমন একটি শীতকালীন সবজি ফলিয়ে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগ বলছেন, তার এই কপি চাষ দেখে অনেকে কৃষক আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘ব্রকলি শীতকালীন সবজি। এই সবজি হৃদরোগ, বহুমূত্র ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। উপজেলায় কয়েকজন কৃষক বানিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু করেছেন। স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের আওতায় ফকিরহাটের কৃষকরা এই ব্রকলি চাষ করছেন। এসব কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেন। আট্টাকা গ্রামের কৃষক শেখ জাহাঙ্গির হোসেন জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সহযোগিতায় তিনি ৫৫শতক জমিতে এই প্রথম বানিজ্যিকভাবে ব্রকলি কপির চাষ করেছেন। চারা লাগানোর দুই মাস পর থেকে তিনি এই কপি বিক্রি শুরু করেছেন। তার এই চাষ করতে প্রায় ৩০হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি পিচ ব্রকলি তিনি ৪৫ থেকে ৬০টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। আগামীতে বৃহৎ পরিসরে এই সবজি চাষ করবেন বলেও তিনি জানান। বেতাগার কৃষক ওয়াহিদ শেখ জানান, তিনি অন্য সবজি চাষের পাশাপাশি ব্রকলি চাষ করেছেন। বাজারে এর দাম ভাল পাচ্ছেন। অনেকে ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামীকে বৃহৎ পরিসরে এর চাষ করবেন বলে জানান এই কৃষক। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপুল মজুমদার ও দেবদাশ বালা জানান, অত্র এলাকায় ব্রকলি মানুষের কাছে একেবারেই নতুন। ফকিরহাটে স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের আওতায় বানিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে এই সবজি ক্রয় করছেন। ব্রকলির পুষ্টিগুণ খুব ভালো। ব্রকলি আকার আয়তন ও দেখতে ফুলকপির মত হলেও পাতা ও ফুলগুলো সাদার পরিবর্তে গাঢ় সবুজ। সাধারণ ফুলকপি বা বাধাকপি দামের চেয়ে বাজারে ব্রকলির দাম একটু বেশি। অন্য সবজির পাশাপাশি কৃষকরা এই ব্রকলি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রকল্পের আওতায় অত্র উপজেলায় প্রথমবার বানিজ্যিকভাবে ব্রকলি চাষ শুরু হয়েছে। কৃষক শেখ জাহাঙ্গিরের মত কয়েকজন কৃষকের পরিশ্রমে ব্রকলি চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আশা করি তাদের এই চাষ দেখে অন্য কৃষকরাও এ সবজি চাষে ঝুঁকবেন। সবজি বহনের জন্য কৃষি বিভাগ শেখ জাহাঙ্গির হোসেনকে একটি ভ্যান দিয়েছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সব ধরনের কারিগরী সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। তিনি আরো বলেন, বয়সের তারুণ্য ধরে রাখা সহ মেধাবিকাশ, চোখের দৃষ্টি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ মানবদেহের স্বাভাবিক পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি ব্রকলি অর্থনৈতিক লাভজনক একটি ফসল। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, ব্রকলি ভাল ফলন ও বাজারে ভাল দাম পাওয়ার জন্য এই চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ অন্যান্য সবজির চেয়ে ব্রকলি অপেক্ষাকৃত বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ ও ক্যান্সার প্রতিরোধক। বাণিজ্যিকভাবে ব্রকলি চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফকিরহাটে বানিজ্যিকভাবে ব্রকলির চাষ করে কৃষকরা সাড়া ফেলেছেন। আগামীতে অন্য সবজি চাষের পাশাপাশি অনেকেই এই ব্রকলির চাষ করবেন বলে তিনি জানান।