জলদস্যুদের কবলে পড়ার দুই দিন পর সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করেছে বাংলাদেশী কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছেছে।
বিবিসি বাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম’র গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম। তিনি বলেন, ’দুপুর ১টার দিকে আমরা জানতে পেরেছি যে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করেছে। বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’ জাহাজটি সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলে নোঙর করা হয়েছে। লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো’র (আইএমবি) বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। সোমালি জলদস্যুদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে জাহাজের মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ১৩ বছর আগে একই কোম্পানির আরো একটি জাহাজ অপহরণ করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। এমভি জাহান মণি নামের ওই জাহাজে ২৫ জন নাবিক এবং তাদের একজনের স্ত্রী ছিলেন।
অনেক দেনদরবার ও দরকষাকষি শেষে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিয়ে এক শ’ দিন পর তাদের মুক্ত করে দেশে আনা হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে জলদস্যুরা এবারো বড় অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। সেজন্য প্রস্তুতিও গ্রহণ করছে জাহাজের মালিকপক্ষ। ‘নাবিকসহ জাহাজটি নিরাপদে উদ্ধার করে আনাই আমাদের লক্ষ্য। সেজন্য ইতোমধ্যেই আমরা তৃতীয় একটি পক্ষের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছি যেন দস্যুরা যোগাযোগ করা মাত্রই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন কেএসআরএম’র গণমাধ্যম উপদেষ্টা।
পণবন্দিদের কী অবস্থা?
পণবন্দি নাবিকরা সবাই সুস্থ আছেন বলে দাবি করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ।
‘জাহাজের সাথে আমরা আবারো যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। নাবিকরা সবাই এখন সুস্থ আছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন,’ বলেন মিজানুল ইসলাম। এদিকে নাবিকদের কেউ কেউ পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করেছেন। ‘এক দিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে সেহরির পরে আমার ছেলের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পেয়েছি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন পণবন্দি নাবিক আতিকুল্লাহ খানের মা শাহানুর বেগম। আতিকুল্লাহ খান এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার। জাহাজে পণবন্দিদের সবাই সুস্থ আছেন বলে পরিবারকে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটির ২৩ নাবিকের সবাইকে পণবন্দি করে রাখা হয়েছে। এরপর সেদিন সন্ধ্যার দিকে খবরটি জানাজানি হয়। নাবিকদের কয়েকজন জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে খবরটি জানান। এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করেন পণবন্দিদের অনেকে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জলদস্যুরা সবার ফোন কেড়ে নেয়। ফলে বুধবার সারাদিন নাবিকদের কারো সাথেই যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবার ও জাহাজের মালিকপক্ষ। প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ভোরে আবারো নাবিকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। তাহলে কি নাবিকদের সবার ফোন ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে? ‘সেটা মনে হয় না। অল্প সময়ের জন্য একটু যোগাযোগ করতে দিয়ে হয়তো আবার ফোন কেড়ে নিয়েছে। যার কারণে একবারই কোনোমতে একটা মেসেজ পাঠাতে পেরেছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন শাহানুর বেগম। সূত্র : বিবিসি