দেশে গত পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের সূচকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে গ্রামা লে দারিদ্র্যের হার কমেছে। একই সময়ে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে শহরাঞ্চলে। ২০১৮ সালে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৫ থেকে ২০২৩ সালে ২১ দশমিক ৬ শতাংশে নামলেও শহুরে দারিদ্র্যের হার ১৬ দশমিক ৩ থেকে বেড়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। গত মঙ্গলবার সানেমের পাঠানো গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় এমন চিত্র।
কভিড-১৯-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দেশের চ্যালেঞ্জ ও দারিদ্র্য নিয়ে সানেম ও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে ‘কভিড-১৯ মহামারী, মহামারী-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং দারিদ্র্যের গতিশীলতা: একটি অনুদৈর্ঘ্য পারিবারিক জরিপ থেকে প্রমাণ’ শীর্ষক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় মৌলিক চাহিদার খরচ পদ্ধতি অনুসরণ করে ২০ স্তরের ভোগব্যয়ভিত্তিক দারিদ্র্যসীমা পরিমাপ করা হয়েছে। ২০ স্তরের মধ্যে আটটি গ্রামীণ, আটটি শহুরে ও চারটি মেট্রোপলিটন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, উচ্চ দারিদ্র্যসীমা অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, গ্রামীণ এলাকায় ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। নিম্ন দারিদ্র্যসীমা অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে চরম দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, গ্রামীণ এলাকায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও শহরা লে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করা হয়েছে রংপুর ও বরিশালে। রংপুরে এ হার ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বরিশালে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সূচকেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। গ্রামীণ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে তা ২০১৮ সালে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ শতাংশে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার প্রদত্ত সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় এসেছে ৩৭ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এর মধ্যে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ড সেবা সর্বোচ্চ সংখ্যক তথা ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। এছাড়া বার্ধক্য ভাতা ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, বিধবা, স্বামী নিগৃহীত, দুস্থ মহিলা ভাতা ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ, আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ভাতা ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই অর্থাৎ ৪৭ শতাংশ সেবা খাতে নিযুক্ত, ৩৬ কৃষি ও ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে কর্মরত। জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় এ হার ৩ দশমিক ৬ ও শহরাঞ্চলে ৪ দশমিক ৬ শতাংশে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, পণ্যের দাম বৃদ্ধি, উপার্জন হ্রাসের মতো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছে নাগরিকদের। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৌশলের মধ্যে ছিল—তাদের খাদ্যাভ্যাসের ধরন পরিবর্তন, সঞ্চয় হ্রাস, ঋণ গ্রহণ, বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছ থেকে নিঃশর্ত সাহায্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর ব্যয় হ্রাস ইত্যাদি। উপরন্তু গ্রামীণ এলাকায় পরিবারগুলো পশুর মজুদ বিক্রি, ফসল ফলনের পদ্ধতি পরিবর্তনের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। সানেমের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচটি সুপারিশে বলা হয়, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সরকারকে সারা দেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালুকরণ, শহুরে দরিদ্র ও নব্য দরিদ্র পরিবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদান করতে হবে।