রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা সফল হবে না: ফখরুল সিরিয়ায় ফ্যাসিস্ট আসাদের অনুগত কর্মকর্তার প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নতুন আমির মামুনুল হক ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে যোগ দিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে তারেক রহমানকে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে -ডা. শফিকুর রহমান আগামী জাতীয় নির্বাচন নিবন্ধিত সব দল নিয়েই হবে: সিইসি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বিএসএফের এবি পার্টির নতুন চেয়ারম্যান মজিবুর মঞ্জু, জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার ফুয়াদ বেগম জিয়াকে দেখতে লন্ডনে মির্জা আব্বাস

নাথান বম এখন কোথায়, কেএনএফের শক্তির উৎস কী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪
কুকি-চিন রাষ্ট্রের কল্পিত মানচিত্র, কেনএনএফ প্রধান নাথান বম ও কেএনএফ লোগো। ছবি: সংগৃহীত

অনটনের সংসারেই জন্ম এবং বেড়ে উঠেছিলেন নাথান বম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার স্নাতক হন। ইউরোপের কয়েকটি দেশেও গেছেন। বন্ধুদের কাছে দাবি করতেন, ইংল্যান্ড থেকে তিনি চারুকলায় ডিপ্লোমাও নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার পর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাতে ক্ষোভ জন্মে। ইংরেজি ভাষায় বইও লিখেছিলেন। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেটাও লাভজনক হয়নি। একসময় একটি এনজিও করেন। এরই মধ্যে নানা মহলের সহযোগিতা নিয়ে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলেন। সেই সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যন্ত এক এলাকায় থেকে কীভাবে এই সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলার রসদ পেলেন নাথান বম? তার শক্তির উৎস কোথায়? এখন তিনি কোথায়ইবা আছেন?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের এই যুগে ক্ষুদ্র সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াই বা ইনসারজেন্সি যখন প্রায় হারাতে বসেছে, সেখানে খুবই ক্ষুদ্র একটা এলাকায় এ ধরনের তৎপরতা চালানো কতটুকু বিবেচনাপ্রসূত, তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। অনেকেই নাথান বমের উচ্চাভিলাষী চরিত্রের দিকেও দিকপাত করেন। পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না কখনোই। তারপরও এই পরিবার এবং জনসংখ্যায় কম একটি জাতিগোষ্ঠীর ভেতর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়ার সুযোগ পাওয়া এলাকার অনেককেই গর্বিত করত। ‘ছেলেটা যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী এবং অনেকক্ষেত্রে হঠকারীও বটে।এটা অনেক আগে থেকেই টের পেতাম। কিন্তু যখন নতুন রাজ্য তৈরির আন্দোলনের নামে এসব সন্ত্রাসী কাজ শুরু করলে, বিষয়টা স্পষ্ট হলো আরও’—পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বম সম্পর্কে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর দুই বছরের বয়সে বড় আরেক পাহাড়ি ব্যক্তি।
তিনি নাথানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তিসংক্রান্ত প্রায় সব কাজ করতে সহায়তা করেছিলেন। একটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একজন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাবেন পড়াশোনা করার, সেটা নিশ্চিত করতে যত সম্ভব সবকিছু সহযোগিতা করেন তিনি। তিনি আরও জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাথানকে ভর্তির জন্য তৎকালীন উপাচার্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সহযোগিতা করেন। ভর্তি হওয়ার পর নাথান একপর্যায়ে এই ব্যক্তির সঙ্গে আর তেমন কোনো যোগাযোগ রাখতেন না। কেএনএফ নামের সশস্ত্র সংগঠন গড়ার ঘটনা জানার পর তিনি লোক মারফত তাঁকে সাবধান করে দিলেও নাথান সেগুলোর দিকে কর্ণপাত করেননি।
নাথান বম পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার বিচারে প ম বম জনগোষ্ঠীর সদস্য। এই জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার এডেনপাড়া সড়কে নাথানের পৈতৃক নিবাস। পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না কখনোই। তারপরও এই পরিবার এবং জনসংখ্যায় কম একটি জাতিগোষ্ঠীর ভেতর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়ার সুযোগ পাওয়া এলাকার অনেককেই গর্বিত করত।
নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। জেএসএস সমর্থিত এই ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন।
নাথানের এলাকার অধিবাসী, সম্পর্কে নাথানের চাচা হন, এমন একজন বলছিলেন, ‘নাথান যে এত ভয়ানক একটা অবস্থানে চলে যাবে সেটা কখনো ভাবেননি। তার কিছু কর্মকা- উদ্ভট লাগত। শুনতাম এলাকার যুবকদের একত্র করে সে দল পাকাচ্ছে। শুরুতে খুব একটা পাত্তা দিইনি। কিন্তু যখন তার গতিবিধি একটু সন্দেহজনক মনে হলো, আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, এই পথে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে বড় ধরনের অর্থের লোভ পেয়েছিল। সেটাই তাঁকে শেষ করে দিল। এখন তার জন্য পুরো বম জাতির মানুষ একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’
নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। জেএসএস সমর্থিত এই ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। এর পাশাপাশি নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকতেন। বান্দরবানের চেঙ্গি স্কোয়ারে জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আবক্ষ মূর্তি মুন্নি দেওয়ানের সঙ্গে তৈরি করেন নাথান বম। তবে একপর্যায়ে জেএসসের সঙ্গও ছাড়েন তিনি।
শিক্ষাজীবনের পর: মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে নাথানের পড়াশোনায় একাধিকবার বিঘœ ঘটে। তারপরে শেষে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। এরপর যখন এলাকায় ফিরে যান, তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি। নাথান সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য বেশ তদবির করেছিলেন। কিন্তু এই কাজ তিনি পাননি। এটা তাঁকে বেশ ক্ষুব্ধ করে। নাথানের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলছিলেন, কয়েকজন চাকমা যুবক ওই চাকরি পেয়েছিলেন। নাথান মনে করতেন, তাঁর জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কম বলে চাকরিটা তাঁকে দেওয়া হয় নাই। চাকমারা সংখ্যায় বেশি, সে জন্য তারা সুযোগ পেয়েছে। এ জন্য নাথান চাকমাদের ওপর কিছুটা বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। চাকরি না পেয়ে নাথান একটি রিসোর্ট করে তোলেন পাড়ার কাছে। সেই ব্যবসা কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাঁকে অনেকেই দেখেছেন ধর্মীয় বইপুস্তক নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করতে। এসব করতে গিয়ে মিজোরামের কিছু ধর্মীয় গুরুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাঁদের সহায়তায় ইউরোপেও যান নাথান। সেখানে দুটি ডিপ্লোমা করেছেন বলে বন্ধুদের জানান। তবে অনেকেই এর সত্যতা সঠিক করে বলতে পারেন না। একপর্যায়ে তিনি বিয়ে করেন।
নাথানের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলছিলেন, কয়েকজন চাকমা যুবক ওই চাকরি পেয়েছিলেন। নাথান মনে করতেন, তাঁর জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা কম বলে চাকরিটা তাঁকে দেওয়া হয় নাই। চাকমারা সংখ্যায় বেশি, সে জন্য তারা সুযোগ পেয়েছে। এ জন্য নাথান চাকমাদের ওপর কিছুটা বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন।
কেএনডিও থেকে কেএনএফ: এডেন পাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নাথান বম। এই প্রতিষ্ঠানের অর্থের উৎস নিয়ে অনেকেরই ঔৎসুক্য থাকলেও তার রহস্য কখনো উন্মোচন করা যায়নি। নাথান সেই সময় তার জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একত্রিত করার জন্য নানারকম ভাবনা ভাবতে থাকেন। এসময় ‘জো’ নামে ইংরেজি ভাষায় একটা বইও লিখে ফেলেন। এর দাম ৩০০ টাকা ছিল। এই সংগঠনটির আড়ালে তলে তলে নাথান কর্মী সংগ্রহ করতেন বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
নাথানের ওই চাচা বলছিলেন, নাথান অর্থের হাতছানি পেয়েছিল কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে। ২০১৮ সালে সে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিল। কিন্তু সেই মনোনয়নপত্র বৈধ হয়নি। নাথানের আর নির্বাচনও করা হয়নি। তবে সশস্ত্র আন্দোলন করার প্রচেষ্টা তখন থেকেই চলছিল।
২০১৮ সালের শেষদিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর নাথানের কর্মকা- অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাঁর কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে নাথান এবং তাঁর সঙ্গীসাথিরা এক ধর্মীয় পাস্তরকে তাঁদের সেই এনজিওর অফিসে তুলে বেধড়ক মারধর করে। আহত অবস্থায় তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়। এর পর পরই নাথান এলাকা ত্যাগ করেন। তিনি মিয়ানমারের কিছু অংশ এবং ভারতের মিজোরামে প্রায় যাতায়াত করতেন বলে অনেকে জানান।
২০১৮ সালের শেষদিকে নাথানসহ বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের চিন রাজ্যে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরপর তিনি এলাকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসার পর নাথানের কর্মকা- অনেকের চোখেই সন্দেহের সৃষ্টি করে
কেনএফের সশস্ত্র তৎপরতা: নাথানের দল কেএনফের প্রচারের একটা বড় অংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জেএসএস এবং চাকমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অবস্থান নেওয়া। অনেকেই মনে করেন, জেএসসের বিরুদ্ধে একটা সশস্ত্র দলের অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের হোক, এটা যাঁরা চাইতেন, তাঁরাই নাথানকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।
২০২২ সালের দিকে ফেসবুকে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণা, সশস্ত্র দলের নানার ছবি ইত্যাদি দিয়ে কেনএফের কর্মকা- জাহির করলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ২০২২ সালের মে মাসে জাতীয় দৈনিকগুলোর মধ্যে প্রথম প্রথম আলোতেই কেনএফের অস্তিত্বের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই সময় এই প্রতিবেদক রুমা থানার ওসি এবং বান্দরবানের তৎকালীন পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁরা এই সব কর্মকা- নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেননি। তবে এরপর একাধিক সশস্ত্র অভিযানে নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিযোগ ওঠে কেএনফের বিরুদ্ধে। অক্টোবরের দিকে র‍্যাবের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে কেএনএফের যোগাযোগের বিষয়টি তখন গণমাধ্যমকে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপরই কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান দ্রুততার সঙ্গে পরিচালিত হতে থাকে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠলে স্থানীয় গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি মিলে একটি শান্তি কমিটিও তৈরি করেন।
নাথান বম কোথায় আছেন, সেটা আমরা অবগত নই। তবে এখন এত বড় বড় অপারেশন বাংলাদেশে হচ্ছে, সেখানে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর বড় নেতা অর্থাৎ নাথান যে কাছে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এটা ধরে নেওয়া যায়। কারণ, এত বড় অভিযানে মূল নেতা দূরে থাকবেন, এটা বোধ হয় ঠিক নয়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মিজোরাম শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
নাথান এখন কোথায়: এই শান্তি কমিটির সঙ্গে ইতিমধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠক হয় গত ৫ মার্চ। সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ২২ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই একাধিক ব্যাংকে হামলা, থানায় হামলাসহ নানা কর্মকা- শুরু করে দিল কেএনএফ। নাথানের এই তৎপরতার ফলে শান্তি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরে আসার কথা জানান শান্তি কমিটির নেতারা। এই কমিটির সদস্যসচিব জারলাম বম বলেন, ‘জাতিসত্তার মানুষের দিকে চেয়ে সমস্ত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শুধু শান্তির জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হয়ে গেল। শান্তি প্রক্রিয়ার মাঝখানে কেএনএফ কেন এই কাজ করল, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’ জারলাম বম জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে তাঁর সঙ্গে নাথানের কথা হয়েছিল। নাথান তখন জানিয়েছিলেন যে তিনি মিজোরামে আছেন। এরপর শান্তি প্রক্রিয়ায় তিনি কেএনফের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নাথানের সঙ্গে এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
জাতিসত্তার মানুষের দিকে চেয়ে সমস্ত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে শুধু শান্তির জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হয়ে গেল। শান্তি প্রক্রিয়ার মাঝখানে কেএনএফ কেন এই কাজ করল, তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
শান্তি কমিটির সদস্যসচিব জারলাম বম: নাথান কি সত্যিই মিজোরামে ছিলেন কখনো? এমন প্রশ্নের জবাবে বম জাতি গোষ্ঠীর এক প্রবীণ সদস্য বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই জানেন নাথান মিজোরামের লংটলাই জেলার মুনাউন গ্রামে থাকতেন। এটা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। তবে নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না।’ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বলিপাড়ার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৈমুর হোসেন খান বলেন, ‘নাথানের অবস্থান কোথায়, এটা আসলে নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে একটা শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা কীভাবে হঠাৎ করে আবার হামলার ঘটনা ঘটাল, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আমরা এ নিয়ে তদন্ত করছি। ব্যাংকের হামলা যে তারা ঘটিয়েছিল, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। তবে বৃহস্পতিবার রাতে থানায় কারা হামলা করেছিল, সে ব্যাপারটা এখন নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
সংবাদিকেদের সঙ্গে মিজোরামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা কেউই তাঁদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মিজোরাম শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘নাথান বম কোথায় আছেন, সেটা আমরা অবগত নই। তবে এখন এত বড় বড় অপারেশন বাংলাদেশে হচ্ছে, সেখানে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর বড় নেতা অর্থাৎ নাথান যে কাছে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এটা ধরে নেওয়া যায়। কারণ, এত বড় অভিযানে মূল নেতা দূরে থাকবেন, এটা বোধ হয় ঠিক নয়।’-প্রধমআলোর সৌজন্যে




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com