দল মত নির্বিশেষে সবাইকে একসাথে হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে চেতনা, যে স্বপ্ন ছিল সেগুলোকে বাস্তবায়িত করতে, আমরা সবাই আবার এক জোট হয়ে লড়াই শুরু করি। যে লড়াইয়ে অবশ্যই আমরা তাদের পরাজিত করতে সক্ষম হবো। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক স্মরণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘নাগরিক জাগরণে করণীয় ও সিরাজুল আলম খান’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি ।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খানের স্মৃতি ধারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি স্বাধীনতা, সংগ্রামে চালিকা শক্তি হিসেবে নিজের জায়গা, দল থেকে কাজ করেছেন। তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না, তার অবদান যারা অস্বীকার করতে চায় তারা দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করতে চায়। স্বাধীনতার ইতিহাসকে একটি দল বিকৃত করছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, তারা এক ব্যক্তি ছাড়া আর কারো কথা স্বীকার করতে চান না। যারা স্বাধীনতার সংগ্রামে কাজ করেছে, তারা সব সময় অবহেলায় অস্বীকার করে। যাদেরকে তারা অস্বীকার করে না, তাদেরকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করে।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ থেকে কোনো শোকবার্তা দেয়া হয়নি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কত বড় অকৃতজ্ঞ হলে একটি দল তার মূল চালিকার মধ্যে ছিলেন, তাকে পর্যন্ত স্মরণ করেনি। শুধু সিরাজুল আলম খানই নন, একই কারণে তারা জিয়াউর রহমানকে সহ্য করতে পারে না। যারা প্রত্যেককে স্বাধীনতার সংগ্রামে কাজ করেছে আজকের এই ৫৩ বছরে তাদের অস্বীকার করাটা অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়।
আজকে সবাই দেশের ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি চায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সবাই মিলে আমরা একসাথে কাজ করছি। বাংলাদেশ একটি ভয়ঙ্কর সঙ্কটে ভূপাতিত হয়েছে। এ দেশের অস্তিত্ব আজ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। এমন একটা গোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতা বসে আছে, যারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।
এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন থেকে দূরে ছিটকে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরা মানুষের উন্নয়ন দূরে থাক, তারা মানুষকে নিগৃহ করছে, নির্যাতন করছে। প্রতি মুহূর্তে তারা দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। ‘দুর্নীতিবাজদের বের করতে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, যেটি টোপ দিয়ে মাছ ধরার মতো’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আহারে! আমরা তো দেখলাম, মাছের টোপ দিয়ে কাদের ধরেন। কারণ এগুলোর সাথে তো আপনারা (ওবায়দুল কাদের) নিজেরাই জড়িত। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাজেটে রাঘববোয়ালদের লুটে খাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সিরাজুল আলম খানের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মুক্তির সংগ্রামের যে চালিকা শক্তির সেখানে তিনি কাজ করেছেন। আমি ভিন্ন রাজনীতি করেছি, তিনি ভিন্ন রাজনীতি করেছেন কিন্তু তার যে অবদান সেই অবদান কখনো অস্বীকার করা যাবে না। যারা অস্বীকার করতে চায় তারা আসলে বাংলাদেশে স্বাধীনতা থাকে অস্বীকার করতে চায়। বাংলাদেশে স্বাধীনতাকে বিকৃতি করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, একটি দল এক জন ব্যক্তির অবদানের ছাড়া আর কারো কোনো অবদান স্বীকার কারতে চায় না। এর জন্য তারা বাংলাদেশ স্বাধীনতার পিছনে যারা কাজ করছেন তাদের সবাইকে অবলিলায় অস্বীকার করে। শুধু অস্বীকার করে না, তাদেরকে তারা ছোট করে কথা বলে। একই কারণে তারা জিয়াউর রহমানকেও সহ্য করতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়ে গেছে। যেখানে বাংলাদেশের অস্তিত্ব আছে প্রশ্নের সম্মুখীন। এমন একটি শাসকগোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতার দখল করে বসে আছে যারা বাংলাদেশ সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন দূরে থাক, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন থেকে বহু দূরে বাংলাদেশকে ছিটকে ফেলে দিয়েছে। শাসকগোষ্ঠী এখানকার মানুষের কল্যান করছে না। তারা মানুষকে শোষণ করছে, নির্যাতন করছে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই একসাথে যুগপৎ আন্দোলন করছি। আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা, কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের সমনে এসে দাঁড়িয়েছে এবং এগুলোই আমাদের অর্জন করতে হবে।
১৫ শতাংশ টেক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বলেছেন, মাছ ধরতে আধার (টোপ) দিতে হয়। এটা সেরকম একটা ব্যবস্থা। এতে অন্তত টাকাটা উদ্ধার করা যাবে। এই বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাস্যকর! আমরা দেখলাম টোপ দিয়ে আপনারা কাকে ধরেন। আপনারা নিজেরাই তো এর সাথে জড়িত। বাজেট দেখলে বুঝতে পারবেন রাঘববোয়ালদের লুটে খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব। সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর স ালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।