চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে সুপার এইট পর্বে খেলা একরম নিশ্চিত করেছে। এখন শুধু নেপালকে হারাতে পারলেই পরের রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
টাইগারদের এ জয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে শ্রীলঙ্কার বাদ পড়া নিশ্চিত, এখন বাকি আছে নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। নেদারল্যান্ডসের শেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, নেপালের বাকি দু’টি ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বিপক্ষে।
সাকিব আল হাসানের রানে ফেরা
সাকিব আল হাসান আরো একবার বাংলাদেশের হয়ে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের জয় পাওয়া শেষ ১২ ম্যাচে আটটিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব যখন ব্যাট করতে নামেন বাংলাদেশের রান ছিল ২৩ রানে ২ উইকেট, এরপর তানজিদ তামিমের সাথে ৩২ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন সাকিব। এই ম্যাচের আগে দুই ম্যাচেই সাকিব ব্যাটিং নিয়ে ভুগছিলেন, এবার পল ভ্যান মিকিরেনের বলে চমকপ্রদ এক কভার ড্রাইভ দিয়ে সাকিব শুরু করেন।
ম্যাচের আগে সাকিব আল হাসান ঘাড় সোজা রাখার জন্য ব্যান্ড পড়ে অনুশীলন করেন, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই সাকিবের ব্যাটিংয়ের সময় মাথার অবস্থান নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল, এই সমস্যা কাটাতেই বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসান ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন ছিল কারো পুরো ইনিংসে টিকে থাকা। কেউ জানতো না কত স্কোর আসলে ভালো স্কোর এই উইকেটে।’ সাকিব আল হাসান জানান, এ কারণে বাংলাদেশ বোলিং নেয়ার কথা ভেবেছিল।
সাকিব বলেন, বাংলাদেশ আগে বল করে উইকেট সম্পর্কে ধারণা নিতে চেয়েছিল। এই উইকেটে শুরুর দিকে ব্যাট করা কঠিন ছিল, বল যত পুরাতন হয়েছে তত সহজে বল ব্যাটে এসেছে। সাকিব আলাদা করে রিশাদ হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমানের প্রশংসা করেন এবং জয়ের কৃতিত্ব দিয়েছেন বোলারদের। বাংলাদেশের ১৫৯ রানে সাকিব অবদান রেখেছেন ৬৪ রান, তানজিদ তামিম নিয়েছেন ২৬ বলে ৩৫ রান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২০ বলে ২৫ রান তুলেছেন। রিয়াদের সাথে সাকিব ৩২ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন।
রিশাদ ভূমিকা রাখলেন
রিশাদ হোসেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল লেগস্পিনার হিসেবে নিজের নাম পাকাপোক্ত করার মিশনে ভালোভাবেই লেগেছেন। এ জন্য আহামরি ভালো না করলেও চলবে, কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে লেগস্পিনার নেই বললেই চলে।
সেখানে রিশাদ হোসেন প্রায় বিপ্লব ঘটাচ্ছেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে রিশাদ ছিলেন ‘গেম চেঞ্জার’।
ম্যাচ শেসে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, রিশাদ যে ওভারে ২ উইকেট নিয়েছেন সেই ওভারেই ম্যাচ বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। এর আগে নেদারল্যান্ডস যেভাবে ব্যাট করছিল তাতে মনে হচ্ছিল এই ম্যাচ যেকোনো দিকে যেতে পারে। একটা পর্যায়ে নেদারল্যান্ডস ছিল ১১১ রানে ৩ উইকেট সেখান থেকে ১৩৪ রানে ৮ উইকেটে শেষ হয় ইনিংস। এখানে রিশাদের বড় ভূমিকা ছিল, ১৫তম ওভারে ২২ বলে ৩৩ রান করা এঙ্গেলব্রাখট ও বাস ডি লিডির উইকেট নিয়ে রিশাদ ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেন।
রিয়াদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স
মাহমদুল্লাহ রিয়াদ মাত্র ১ ওভার বল করেন, আর তাতেই ম্যাচে অবদান রাখার মতো পারফর্ম করেন তিনি।
রিয়াদ বল হাতে নেয়ার আগে নেদারল্যান্ডসের ব্যাটর ভিক্রমজিত সিং দুর্দান্ত ব্যাট করছিলেন। ১৬ বলে ২৬ রানে আউট হওয়া এই ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরান রিয়াদ। উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন লিটন কুমার দাস। ব্যাট হাতে লিটনের সময় খুব ভালো না গেলেও গ্রুপ পর্বের সেরা ২টি স্ট্যাম্পিং করেন তিনি। এছাড়া ব্যাট হাতে রিয়াদ ২০ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলেন।
মুস্তাফিজের ১৭ ডট বল
বাংলাদেশের হয়ে উইকেট নিয়েছেন রিশাদ, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।
তবে মুস্তাফিজের বোলিং ছিল বিশেষ কিছু। ২৪টি বলে ১৭টিই ডট বল দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সাথে নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডোয়ার্ডসের উইকেট নিয়েছেন তিনি। চার ওভারে ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এখন বাংলাদেশের সামনে সুপার এইটে খেলার লক্ষ্য, সাকিব আল হাসান ম্যাচের পরে গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে নেপালের সাথে না জেতার কোনো কারণ নেই। সূত্র : বিবিসি