সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

একটি ধর্মতাত্ত্বিক চিন্তা

শহিদুল ইসলাম
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪

বস্তুবাদে শোরগোল বেশি। কারণ তারা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির কাছে ধরাশায়ী হয়। প্রবৃত্তির গোলামে পরিণত আত্মা কোনোদিন পরমাত্মার সাথে মিশতে পারে না। পরমাত্মার সাথে না মিশলে মানবাত্মা শান্তি পায় না। সর্বোচ্চ আনন্দ পেতে হলে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বিজয় অর্জন করতে হয়। সৃষ্টিকর্তা জগৎকে যে কত ভালোবাসেন তা ইন্দ্রিয়াতীত বিষয়; জ্ঞানীয় বিষয় নয়। এমনকি তিনি কিভাবে জগতের সৃষ্টিকাজ সমাধা করেছেন এবং জগৎকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তা মানবীয় জ্ঞানের অতীত। মানুষ সৃষ্টি করে তিনি মানুষের মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব। জাগতিক মুক্তি মানবরচিত মতামত দ্বারা সাময়িক সম্ভব; কিন্তু কালজয়ী সুসামঞ্জস্য এবং যুগের সাথে তাল দিয়ে সভ্যতার ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। এই ভারসাম্যপূর্ণ মতাদর্শ পৃথিবীতে মানবরচিত মতামত দ্বারা সম্ভব না। মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে। স্র্রষ্টার সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো তিনি বান্দার শিক্ষা এবং কিতাব প্রদান করেছেন। এই কিতাবের মধ্যে তিনি মানবজীবনের এমন কোনো অন্ধকার নেই যেখানে জ্যোতির বিচ্ছুরণ ঘটেনি। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করার পর তার চলার পথকে সহজ করে দিয়েছেন। স্রষ্টার অফুরন্ত নিয়ামত পেয়ে যদি সে শোকর আদায় না করে তাহলে তার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। স্র্রষ্টার মর্যাদা এবং মানুষের মর্যাদা উভয়ের মর্যাদা রক্ষা করার পরীক্ষা দিতে হয়। নইলে আত্মগ্লানির আগুনে পুড়তে হয়। মহান স্র্রষ্টা পরাক্রমশালী বাদশাহ। তিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টি করে তিনি তার নিজের চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। রিপুর তাড়নায় যখন বিবেক লয় হয় তখন তার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে জীববৃত্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে। অন্যান্য প্রাণী শুধু জীববৃত্তি দ্বারা সৃষ্ট। মানুষের নৈতিকতাসম্পন্ন আধ্যাত্মিক জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ হয়েছে জগতে শ্রেষ্ঠ। জগতে এসে মানুষ প্রবৃত্তির তাড়নায় অপরাধ করে বসে। এই প্রবৃত্তির কারণে সে নিকৃষ্ট চতুষ্পদ জানোয়ারের চেয়েও অধম হয়ে যায়।
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জ্ঞান ভ্রান্ত হতে পারে। তাই ভ্রান্ত জ্ঞান দ্বারা শাশ্বত জ্ঞানার্জন সম্ভব না। যদি না তিনি অনুগ্রহ করেন। স্র্রষ্টা মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন। তিনি মানুষকে অপূর্ণ করে সৃষ্টি করেছেন, যার কারণে সে ভুল ভ্রান্তির ভেতর নিমজ্জিত। সে জাগতিক গোলক ধাঁধার পড়ে প্রকৃত সত্য থেকে দূরে সরে যায়। পতঙ্গ আলোর দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মুক্তি চায়। কিন্তু তার কল্পনাশক্তি ও চিন্তাশক্তি না থাকায় বারবার ঝাঁপ দিয়ে সে মৃত্যু ডেকে আনে। মানুষেরও মাঝে মধ্যে এমন দশার সৃষ্টি হয়। ইতর প্রাণীর নি¤œস্তরের প্রাণী যেকোনো দিন উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারে না; কিন্তু মানুষ এমন প্রাণী যে নি¤œস্তর থেকে সৃষ্টিকর্তার পরে তার স্থান লাভ করতে পারে। প্রদীপ যেমন তেল টানতে টানতে প্রজ্বলিত হয় পরবর্তী সময়ে তেল যখন টানতে পারে না এমন প্রদীপটা নিভে যায়। তদ্রƒপ মানুষের রক্তপ্রণালীতে যখন টান না থাকে তখন মৃত্যুমুখে পতিত হয়। চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র এগুলোর নিয়ন্ত্রণ শক্তি প্রকৃতিতে নেই। কারণ প্রকৃতির কোনো শক্তি নেই। সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মহান সত্তা একটি সিস্টেম চালু করেছেন, যার কারণে সবকিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে চলেছে।
ইট, পাথর, গাছগাছালি ও পশু-পাখির আত্মা আছে। একটি পাথরও সজীব বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। সদা গতিশীল এবং সদা পরিবর্তনশীল। মানুষ দুনিয়ায় জন্মগ্রহণ করলেই মানুষে পরিণত হয় না; বরং তাকে কঠোর সাধনা এবং ইবধঁঃরভরপধঃরড়হ ড়ভ ংড়ঁষ-এর মাধ্যমে মনের জ্যোতির সৃষ্টি করে মানুষে পরিণত হয়, যা অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে সাধনা লক্ষ করা যায় না। দুনিয়া হলো মানুষের জন্য পরীক্ষাক্ষেত্র। সে গোলকধাঁধার ভেতর পড়ে জাগতিক ভোগলালসায় গা ভাসিয়ে দিয়ে অন্তরের জ্যোতি থেকে মুক্তি পায়। জাগতিক রঙিন চশমায় জগৎকে দেখলে এক রূপ মনে হবে। আবার চক্ষুষমান ব্যক্তিদের কাছে অন্য রূপ মনে হবে। মানুষের রূপের জ্যোতি আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে সম্ভব। কিন্তু আমরা যদি তন্দ্রা আচ্ছাদিত থাকি তাহলে প্রকৃত রূপের জ্যোতি থেকে মুক্ত থাকব, এটি স্বাভাবিক। আমাদের জৈবিক প্রবৃত্তির সাথে আছে আত্মিক ও আধ্যাত্মিক খেলা। এই খেলায় পরাজিত হলে অশান্তির বিভীষিকায় পড়তে হয়। মানুষের জীবন জীবিকায় বহুত্ব নির্ধারিত; কিন্তু স্রষ্টার অস্তিত্ত্বে একত্ববাদ নিহিত। তার সাথে বিজয় হতে মানুষকে আধ্যাত্মিকভাবে বিজয় হতে হয়। মানুষ যদি আধ্যাত্মিক বিজয় লাভ করে তাহলে আসবে শান্তি-মুক্তি, যা তাকে তামাম সৃষ্টি জগতের ভেতর সৃষ্টিকর্তার পরই স্থান করিয়ে দেয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক, প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, সরকারি ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com