বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মোহভাবে নতুন করে লেখা হবে, সেখানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আজ বুধবার সচিবালয়ে আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানোর সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো ৭ মার্চকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বকে ইতিহাস থেকে নাই করে দিচ্ছি না। যেটা ইতিহাসের অংশ, নির্মোহভাবে ইতিহাস নতুন করে লেখা হবে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। কিন্তু সেটিকে দিবস হিসেবে যে চর্চা, এটির একটি রাজনীতি আছে। গণ-অভ্যুত্থানের সরকার সেই রাজনীতি চলতে দিতে পারে না।’
বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করে কি না এই সরকার— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই না।’ এ সময় ‘প্রতিটি দেশে জাতির পিতা থাকে…আমাদের কোনো জাতির পিতা থাকবে না’—এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই ভূখ-ের লড়াইয়ের ইতিহাসে কেবল একজন না, বহু মানুষের অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু শুধু বাহান্ন থেকে শুরু হয়ে যায়নি, আমাদের ইতিহাসের দীর্ঘ লড়াই আছে। ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, সাতচল্লিশের লড়াই আছে এই ভূখ-ের মানুষের, একাত্তরের লড়াই আছে, নব্বই আছে, চব্বিশ আছে। আমাদের এখানে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, যোগেন ম-ল, মাওলানা ভাসানী—অনেক মানুষের লড়াই আছে। আমরা তো মনে করি, এখানে একজন জাতির পিতা না, বরং অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে; যাঁদের অবদানের ফলে এই ভূখ-, এই রাষ্ট্র, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ফলে আমরা এটিকে একটি দলে, একজন ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করতে চাই না।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের যে বহুমুখিতা রয়েছে, নানা মাত্রা রয়েছে, যেটাকে আওয়ামী লীগ এত দিন অস্বীকার করেছে। মাওলানা ভাসানীর অবদান তারা সব সময় অস্বীকার করেছে। অথচ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তাঁকে ইতিহাসে রাখেননি। এখন তা ইতিহাসে নিয়ে আসতে হবে।’ আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের কারণ বলতে গিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় দিবস, সেগুলোকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো এবং যে দিবসগুলোকে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেই দিবসগুলো বাতিল করা হয়েছে। সেগুলো আসলে সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের এবং একটি ফ্যাসিস্ট আদর্শ ও সেই আদর্শকে ধারণ করে এবং সেই আদর্শকে চর্চার জন্য এই দিবসগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যদি মনে হয় এ রকম আরও দিবস বাতিল করা প্রয়োজন বা কিছু অগুরুত্বপূর্ণ দিবস রয়েছে, তাহলে সেগুলোও বাতিল হতে পারে বলে জানান তথ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, নতুন দিবসও যুক্ত হতে পারে। যেমন জুলাই অভ্যুত্থানের ভেতরে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ, স্বাভাবিকভাবে এখানেও কিছু দিবস যুক্ত হবে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস হিসেবে বাতিল করার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৭ মার্চ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস, গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা সেদিন হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করছি না যে সেটি জাতীয় দিবস হওয়ার মতো গুরুত্ব বহন করে। অনেক কিছু হয়তো আমাদের ইতিহাসের অংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসলে ইতিহাসকে নষ্ট করে ফেলেছে। ফলে অনেক কিছু এ মুহূর্তে নেওয়া যাচ্ছে না, যে রকম ৭ মার্চ।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী লীগই নষ্ট করে ফেলেছে। যেভাবে তাঁর মূর্তি করে তাঁর পূজা বাংলাদেশে শুরু করেছে, সেগুলো ফ্যাসিস্ট আইডিওলজির (আদর্শ) অংশ হয়ে গেছে। একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার, যে নতুন বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে এই ফ্যাসিস্ট প্রবণতা রাখতে পারি না।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, গুম-খুন করে, গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল।…কারা তাঁকে জাতির পিতা বলল, কারা জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, এই নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না। আমরা তো বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে চাচ্ছি। ফলে ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসলে আনতে হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আওয়ামী লীগের করা সবকিছুকে মনে করেন জাতীয়! ভোটবিহীন সরকারেরই বৈধতা নেই। সেই সময়ে অনেক কিছু করা হয়েছে। এই সবগুলো জিনিসকে পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।’
সংবিধান দিবস বাতিলের বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধান তো সেদিন (৪ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হয়নি। যেদিন থেকে সংবিধান কার্যকর হয়েছে, সেটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। সে জন্য মনে হচ্ছে, ৪ নভেম্বরকে দিবস হিসেবে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। এত জাতীয় দিবস দরকার নেই বলেও মনে করেন তথ্য উপদেষ্টা।