দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি
কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জারের মৃত্যু নিয়ে বিতর্কের পারদ ক্রমেই বাড়ছে। প্রভাব পড়েছে ভারত-কানাডা দুই দেশেরই কূটনীতিতেও। কানাডা পুলিশ সোমবার দাবি করেছিল, ভারতের উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকরা কানাডায় খলিস্তানপন্থীদের দমনে অপরাধীদের সাহায্য নিচ্ছে। নাম না নিয়ে বিষ্ণোই গোষ্ঠীর কথা বোঝাতে চায় তারা। জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটিকে বিশেষ করে খলিস্তানপন্থী কার্যকলাপকে টার্গেট করার জন্য এই গোষ্ঠীর মদদ নিচ্ছে ভারত। এরপরই মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করে, এই উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের আরও দাবি, কানাডার জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল! মার্কিন সংবাদপত্রটির দাবি, ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে পাওয়া সব প্রমাণ ডোভালের কাছে তুলে দেন কানাডার উপদেষ্টা। হরদীপ সিং নিজ্জার খুনে ভারত যে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সাহায্য নিয়েছে, ওই বৈঠকে সেই কথাও জানায় কানাডা। তবে এই গোপন বৈঠক প্রসঙ্গে দিল্লির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, ওই বৈঠকে কানাডার তরফে ভারতকে জানানো হয়-আমাদের দেশে হিংসা ছড়ানো বন্ধ করুন। ৬ জন ভারতীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধে শিখদের খুন বা হুমকি দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে বলেও ওই বৈঠকে দাবি করেন কানাডার প্রতিনিধিরা। যদিও সেই অভিযোগ মানতে চাননি ডোভাল।
২০২০ সাল নিজ্জারকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কানাডাকে পাঠানো একটি নথিতে জানানো হয়, ১৯৯৬ সালে সে পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় পৌঁছায়। সেই সময় ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করতেন। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তারপর বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। গত বছর কানাডার একটি গুরুদ্বারের সামনে তাকে হত্যা করা হয়। কানাডা প্রশাসন দায় চাপায় ভারতের উপর। তাদের বক্তব্য, এই হত্যার সঙ্গে ভারতীয় হাই কমিশনার যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় কোনও আইনি পদক্ষেপ নেয়া যায়নি তার বিরুদ্ধে।
আগের সব অভিযোগ নয়াদিল্লি খারিজ করলেও ওয়াশিংটন পোস্টের ‘দাবি’ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বিদেশ মন্ত্রক বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন প্রাক্তন প্রধান দ্য ওয়্যারকে বলেন, অমিত শাহের অফিসিয়াল ডোমেনে কানাডিয়ানরা যে ধরনের ক্রিয়াকলাপের পরামর্শ দিচ্ছেন তাতে তিনি জড়িত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এই প্রথম নয়। এক দশক আগে, সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন অমিত শাহের বিরুদ্ধে সোহরাবুদ্দিন, তার স্ত্রী কাউসার বি ও সহযোগী তুলসীরাম প্রজাপতিকে ভুয়া পুলিশ এনকাউন্টারে হত্যার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ট্রায়াল কোর্ট দ্রুত তাকে অব্যাহতি দেয় এবং সিবিআই আপিল না করার সিদ্ধান্ত নেয়। সূত্র: দ্য ওয়্যার