জুমার নামাজের আগে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় একটি আমল। এ সময় কথা বলা বা গল্পে লিপ্ত থাকা নিন্দনীয় অপরাধ। যারা এ সময় কথা বলে এবং গল্পে লিপ্ত থাকে, তাদের আল্লাহর রাসুল (সা.) গাধার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন খুতবার সময় কথা বলে, সে ভারবাহী গাধার মতো (বোঝা বহন করে, ফল ভোগ করতে পারে না)। আর যে ব্যক্তি অন্যকে চুপ করতে বলে তারও জুমা নেই। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২০৩৩) উল্লিখিত হাদিসে খুতবার সময় কথা বলা ব্যক্তিকে গাধার সঙ্গে তুলনা দেওয়া হয়েছে। কারণ গাধাকে সবাই নির্বোধ প্রাণী জানে। তাই মুসল্লিদের উচিত হলো মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শ্রবণ করা।
যে ব্যক্তি এই মূল্যবান সময় পাওয়ার পরও বিভিন্ন অনর্থক কাজ ও কথার মাধ্যমে তা অতিবাহিত করে সে হলো ওই গাধার মতো নির্বোধ যে মূল্যবান কিতাব বহন করছে, কিন্তু তার মূল্য অনুধাবন করতে পারছে না। অর্থাৎ তার সামনে খতিব মূল্যবান খুতবা করছেন এবং বিশেষ একসময় চলছে তবু সে ওই সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারছে না। নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে গাধার মতো এই মহান নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি আরো শক্তিশালীভাবে সহিহ বুখারির এক বর্ণনা এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লিকে ‘চুপ থাকো’ বলবে, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে। (বুখারি, হাদিস : ৯৩৪)
এই হাদিসের মাধ্যমে মূলত জুমার খুতবা চলাকালে কথাবার্তা ও গল্প না করার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন। কারণ হাদিসের ভাষ্যমতে, খুতবার সময় অন্য কাউকে ভালো আদেশ দিয়ে ‘চুপ করো’ বললেও তা অনর্থক কথার পর্যায়ে পড়ে। তাহলে অন্য কথাবার্তার অবস্থা তো সহজেই অনুমেয়। তা ছাড়া জুমার দিন খুতবার সময় অনর্থক কথা ও কাজ থেকে যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি মনোযোগ সহকারে চুপচাপ খুতবা শোনার ফজিলতও বর্ণনা করা হয়েছে।
এক হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করার পর জুমার সালাতে এসে নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনে, (তাহলে এর ফজিলত হলো) তার পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি (অহেতুক) কঙ্কর স্পর্শ করল সে অনর্থক, বাতিল, ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কাজ করল। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৭৩) উল্লিখিত হাদিসে আমাদের জন্য কয়েকটি শিক্ষা রয়েছে।
১. জুমার খুতবা চলাকালে চুপ থাকা ওয়াজিব।
২. জুমার খুতবা ছাড়া ইমাম ভিন্ন কোনো আলোচনা বা নসিহত করলে ওই মুহূর্তে কথা বলা যদিও বৈধ, কিন্তু তা অনুত্তম। কারণ ইমাম,ওয়ায়েজ বা আলেমরা মানুষকে দ্বিনের পথে ডাকেন এবং সৎকাজের উপদেশ দেন। তাই মানুষের উচিত তা শুনে এর ওপর আমল করা।
৩. খতিব সাহেব জুমার খুতবা শুরুর আগে যে আলোচনা করেন তা এই হাদিসের অনর্থক কথা বা কাজ করার হুকুমে আসবে না। কারণ এটি মানুষের জন্য কল্যাণকর।
৪. সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ইলম ও নসিহতের মজলিস থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ। যার মাধ্যমে মানুষ গাধার স্তরে নেমে আসে। মহান আল্লাহ আমাদের শিষ্টাচার মেনে খুতবা শোনার তৌফিক দান করুন।