অন্তর্র্বতী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে সুইজারল্যান্ডে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভায় অবস্থিত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সে বিষয়ে জবাবও দিয়েছে তারা। এ বিষয়ে আরও বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মূলত এ ধরনের ঘটনা বিব্রতকর। রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা একজন উপদেষ্টাকে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির বিষয়েও তাদের সচেতন থাকা উচিত। একই সঙ্গে হেনস্তাকারীদের কাছে উপদেষ্টার উপস্থিতর তথ্য আগে দেওয়া ছিল বলেও দূতাবাসের বিরুদ্ধ অভিযোগ উঠেছে। সবকিছু বিবেচনা করে জেনেভার মিশনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, তারা জবাবও দিয়েছে। তাদের জবাব পর্যালোচনা করছে মন্ত্রণালয়। তবে সেখানকার রাষ্ট্রদূতকে ফেরত আনা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, দূতাবাসের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, সেটি গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। ভিডিওতে উপদেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তাকে দেখা গেলেও তার কোন শক্ত ভূমিকা নজরে আসেনি। সুতরাং তারা দায় এড়াতে পারেন না। তারপরও সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া আছ, মন্ত্রণালয় সেটিই ফলো করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গত ৭ নভেম্বর জেনেভা বিমানবন্দরে গাড়ি থেকে নামেন। এসময় হঠাৎ একদল লোক এসে আইন উপদেষ্টাকে ঘিরে ধরেন। তাকে এবং সরকারকে নিয়ে নানান মন্তব্য করতে থাকেন। এসময় উপদেষ্টাকে নানানভাবে হেনস্তা করেন তারা। তখন তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানও দেন।
নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেছেন, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ঘটনায় জেনেভার বাংলাদেশ মিশনের কোনো গাফিলতি, নিরাপত্তা কিংবা প্রটোকলের ঘাটতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এক ফেসবুক পোস্টে আনসারী বলেন, ‘আসিফ নজরুল ভাইয়ের ওপর হামলে পড়া এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পরিণতি মাফিয়া দলের এই জঙ্গি উত্তরাধিকারদের ভোগ করতেই হবে। খতিয়ে দেখতে হবে জেনেভার বাংলাদেশ মিশনের যে কোনো গাফিলতি, উপদেষ্টার যথাযথ নিরাপত্তা কিংবা প্রটোকলের ঘাটতি।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. শামছুদ্দীন মাসুম বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা মিশনের গাড়িতেই বিমানবন্দরে যান। সেখানে তার সঙ্গে একজন কর্মকর্তাও ছিলেন। ভিডিওতে তাকেও দেখা গেছে। প্রোটোকল নিয়েই তিনি সেখানে গেছেন। তবে আগে থেকে তার বিমানবন্দরে উপস্থিতির তথ্য দেওয়া ছিল কি না সেটা আমরা জানি না।’ এ বিষয়ে জানতে জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি।
শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে গত ২৬ জুন তারেক মো. আরিফুল ইসলামকে জেনেভায় জাতিসংঘের দপ্তরগুলোয় বাংলাদেশের পরবর্তী স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি মোহাম্মদ সুফিউর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হন।