শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

ধরা পড়ার ভয়ে আরও ৬ জনকে হত্যা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদ ব্রিফিং করেন র‌্যাব-১১-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন, ইনসেট আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান

ক্ষোভ থেকে প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে
এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন—র‌্যাব। বাহিনীটি জানিয়েছে, বাকী বকেয়া বেতনের দাবি,দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না বাড়ানো এবং জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার দুর্ব্যবহারের কারণে ক্ষোভ থেকে ওই সাতজনকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কুপিয়ে হত্যা করে জাহাজেরই আরেক স্টাফ। চাঁদপুরের হাইমচরে জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আকাশ ম-ল ওরফে ইরফান (২৬) ক্ষোভ থেকে জাহাজের মাস্টারকে হত্যা করেন। পরে ধরা পড়ার ভয়ে অন্যদের হত্যার পরিকল্পনা করেন। তিনি একাই এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরের শাকতলা এলাকায় র‌্যাব-১১-এর সিপিসি-২ কুমিল্লা কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিং হয়। সেখানে এ সব তথ্য জানান র‌্যাব-১১-এর উপ–অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
র‌্যাবের ভাষ্য, নিয়মিত বেতন-ভাতা ও ছুটি না পাওয়া এবং বেতন না বাড়ানোর জেরে এমভি আল-বাখেরা জাহাজের মাস্টারের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন আকাশ। ঘটনার সময় খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে মাস্টারকে হত্যা করেন তিনি। এরপর চিন্তা করেন, অন্যরা জীবিত থাকলে তিনি সহজেই ধরা পড়ে যাবেন। তখন জাহাজে থাকা বাকি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। জাহাজে থাকা অন্য সাতজনকে আঘাত করেন। এর মধ্যে একজন বেঁচে যান।
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করা জাহাজটিতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-৬ যৌথ অভিযান চালিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারি থেকে আকাশকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার জগদীশ ম-লের ছেলে। তিনি জাহাজটিতে প্রায় ৮ মাস ধরে লস্কর পদে কর্মরত ছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় আকাশের কাছ থেকে একটি হ্যান্ড গ্লাভস, একটি ব্যাগ, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা, নিহত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত পাঁচটি ও আকাশের ব্যবহৃত দুটিসহ মোট সাতটি মুঠোফোন এবং বিভিন্ন জায়গায় রক্ত মাখানো নীল রঙের একটি জিনস প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। ঘটনার সময় ওই জিনস প্যান্ট পরেছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, এমভি আল-বাখেরা জাহাজ থেকে গত সোমবার বেলা তিনটার পরে পাঁচজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জাহাজের মালিক মাহবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় একটি মামলা করেন। তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় গতকাল রাতে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আকাশ ম-ল ওরফে ইরফানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ র‌্যাবকে বলেছেন, তিনি প্রায় আট মাস ধরে এই জাহাজে চাকরি করছেন। জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময়মতো পেতেন না। বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া একাই ভোগ করতেন। এ ছাড়া জাহাজের মাস্টার কর্মচারীদের সঙ্গে রাগারাগি করতেন। কারও ওপর নাখোশ হলে তাঁকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। তাদের বকেয়া বেতনও দিতেন না। এসব নিয়ে তিনি মাস্টারের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর আকাশ তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে নিজের কাছে রেখে দেন। ২২ ডিসেম্বর সকাল আটটায় তাঁরা মোট ৯ জন জাহাজে ৭২০ টন ইউরিয়া সার নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। ওই রাতে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রথমে তিনি মাস্টারকে হত্যা করেন। পরে একে একে অন্যদের কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে আকাশ নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন। জাহাজটি একপর্যায়ে ইশানবালা খালের মুখে মাঝিরচরে আটকা পড়ে। তিনি জাহাজটি নোঙর করে পাশ দিয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যান। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আকাশকে হাইমচর থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা নেই। তিনি মাদক সেবন করতেন না বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন।
সাত খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। এদিন রাতেই হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে আকাশ মন্ডল ইরফান নামে একজনকে বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। খুন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন সুকানি জুয়েল। গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের দেওয়া তথ্য মতে র‌্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বাজার করতে ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিনি তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, সেটি জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল।
র‌্যাবের দাবি, হত্যার দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। ইরফানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে র‌্যাবের দাবি, ইরফান যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন তখন জাহাজ মাঝ নদীতে নোঙর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে ট্রলার চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যান। র‌্যাবের ভাষ্য, মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার সময় অন্যরা দেখে ফেলায় ইরফান জাহাজের সবাইকে হত্যা করেন। এর আগে গত সোমবার বিকালে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজ আল বাখেরা থেকে পাঁচজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে নিলে আরও দুজন মারা যান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com