চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত নিয়ে দোকানঘর নির্মাণ, পরবর্তীতে বন্দোবস্তের চার থেকে পাঁচগুণ জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বিল্ডিং কোড না মেনেই নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। এভাবেই বেহাত হয়ে যাচ্ছে নোয়াখালী শহরের গণপূর্ত বিভাগের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। সম্প্রতি ভোরের কাগজসহ বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব দখল কর্মযজ্ঞ দখলদারদের কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। সরকারি জায়গার জলাশয়, খাল ও ড্রেন দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ এসব স্থাপনার কারণে শহরজুড়ে তৈরি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে নোয়াখালী প্রধান সড়কের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে সোনালী ব্যাংক হতে বকশি মিয়াজির পুল পর্যন্ত চান্দিনা ভিটির বরাদ্দপত্র, হকার্স মার্কেটের বরাদ্দপত্র প্রেরণ ও সরেজমিনে পরিমাপের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। সরেজমিন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন, আবদুর রহমান, আবুল হাসেমসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, শহরের আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালী দপ্তরের সামনে ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন খোকন ৬৫ ফুট সরকারি ভূমি চান্দিনা ভিটি হিসেবে বন্দোবস্ত নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বিশাল সেন্টার’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে নোয়াখালী চার লেন সড়ক বাস্তবায়নের জন্য তার বন্দোবস্তকৃত ওই ৬৫ ফুট চান্দিনা ভিটি থেকে ২৪ ফুট ভূমি অধিগ্রহণ করে নেয় সরকার। এজন্য সাহাব উদ্দিন খোকনকে ৮৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়েও তার বন্দোবস্তকৃত ৪১ ফুট জায়গার বাইরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠানের পিছনের অংশের ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ ফুট খালি সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। এতে মানা হয়নি কোনো বিল্ডিং কোড। স্থানীয়রা বলেন, সাহাব উদ্দিন খোকনের মতো জেলা শহরের সোনালী ব্যাংকের দক্ষিণ পাশ থেকে বকসি মিয়াজির পোল পর্যন্ত প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে ৬৫ ফুট সরকারি ভূমি চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্ত নিয়ে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তুলেন অবৈধ স্থাপনা। কেউ কেউ সরকারি খাল, ড্রেন ও কার্লভাটের মুখ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফেলেছেন। এসব বহুতল ভবন নির্মাণে কেউই পৌরসভার বিল্ডিং কোড মানেননি বা প্ল্যান অনুমোদন নেননি। সরকারি জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় জেলা শহরে এবার বন্যা-পরবর্তী সময়ে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণের কারণে শহরের সৌন্দর্য নষ্টসহ দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। এছাড়া শহরের জজকোর্ট এলাকা, ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট এলাকা, নোয়াখালী সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশ, হাসপাতাল সড়কের দু’পাশেও গণপূর্ত বিভাগের সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, শহরজুড়ে সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তোলার বিষয়ে ভোরের কাগজসহ বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রধান সড়কের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে সোনালী ব্যাংক হতে বকশি মিয়াজির পুল পর্যন্ত চান্দিনা ভিটির বরাদ্দপত্র, হকার্স মার্কেটের বরাদ্দপত্র চেয়ে দখলদারদের চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। ওই চিঠি প্রদানের পর গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালীর কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলদারদের সঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের রফাদফা করে দেয়ার নামে চাঁদা আদায়ে মাঠে নামে একটি চক্র। এতে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন স্থানীয়রা। তবে শহরজুড়ে এসব সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান। তিনি বলেন, গত ১৫-২০ বছরে শহরের বেশির ভাগ সরকারি জায়গা, জলাশয় ও খালগুলো দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল, যার কারণে এখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সরকারি এসব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জলাশয় উন্মুক্ত ও খালগুলোর পানির গতিপথ সচল তারা সবসময় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন। গণপূর্ত বিভাগ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল হাসান বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন জমি জেলা প্রশাসক কার্যলায় থেকে চান্দিনা ভিটি নামে কিছু দোকান ১.৫০ শতাংশের কম/বেশি পরিমাণে লিজ দেয়া হয় এবং হকার্স মাকের্টের জন্য দেয়া হয় এক একর জমি। যার তথ্য গণপূর্ত অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয়ে নাই। কিন্তু দেখা গেছে কিছুু বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তি বরাদ্দের চেয়ে বেশি জমি দখল করে আছেন। তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে নোয়াখালী প্রধান সড়কের পশ্চিম ও পূর্ব পাশে সোনালী ব্যাংক হতে বকশি মিয়াজির পুল পর্যন্ত চান্দিনা ভিটির বরাদ্দপত্র, হকার্স মার্কেটের বরাদ্দপত্র প্রেরণ ও সরেজমিনে পরিমাপের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ চেয়ে ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ পেলেই আমরা যাছাই-বাছাই শেষে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধার করবো।