বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পাঁচবিবি পৌরসভার প্রধান ড্রেনটি দীর্ঘ ২৫ বছরেও সংস্কার হয়নি: দুর্ভোগে এলাকাবাসী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উলিপুর প্রেসক্লাবের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত জগন্নাথপুর থানার ওসি রুহুল আমীন জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত চকরিয়ায় মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধে সড়ক পুলিশের মাইকিং কালীগঞ্জ পৌরসভায় টিসিবি-র পণ্য বিতরণে অব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক অনিয়ম রূপগঞ্জে টায়ারস কারখানায় আগুনে ১৮২জন নিখোঁজ, স্বজনদের থানায় অবস্থান চরফ্যাসনের চরাঞ্চলে মহিষ পালনে সংকট ও সম্ভাবনা চকরিয়ার বদরখালীতে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আটক ৮ পটুয়াখালীতে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পিরোজপুরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ

টিউলিপের চীন সফর বাতিল, পিছু ছাড়ছে না ব্রিটিশ মিডিয়া

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫

‘বিনা মূল্যে’র ফ্ল্যাট নিয়ে মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। ব্রিটিশ মিডিয়া ডেইলি মেইল দাবি করছে ‘বিনা মূল্যে’ পাওয়া ফ্ল্যাট নিয়ে যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক মিথ্যা বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলন ওই ফ্ল্যাট। অথচ দুই বছর আগে টিউলিপ দাবি করেছিলেন, বাবা-মা তাকে এই ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। ডেইলি মেইল ছাড়াও একাধিক ব্রিটিশ মিডিয়া টিউলিপের বিনামূল্যে পাওয়া ফ্ল্যাট ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার চুক্তিতে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। মন্ত্রী হিসেবে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ব্রিটেনের সরকারি দলও। এমনকি টিউলিপকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য মেইল অন সানডের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপকে দুই বছর আগে একাধিকবার প্রশ্ন করা হয় যে তিনি কিভাবে দুই বেডরুমের ওই ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জবাবে ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এই প্রশ্ন তোলায় পত্রিকাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।
অথচ টিউলিপকে ‘কৃতজ্ঞতা’স্বরূপ ওই ফ্ল্যাট উপহার দেয়া হয়েছিল বলে লেবার পার্টির সূত্র থেকেও এখন নিশ্চিত করা হয়েছে। ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা টিউলিপের উদ্দেশে বলেছেন, গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তিনি যেন পদত্যাগ করেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে টিউলিপ নিজেকে ‘স্লিজ ওয়াচডগ’ বলে উল্লেখ করেছেন। স্লিজ শব্দটি ব্রিটিশ রাজনীতিতে ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারীর মুখে পড়ে। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্লিজ চমৎকারভাবে স্থিতিস্থাপক রাজনৈতিক পদগুলোর মধ্যে একটি যা কিছু ভালোভাবে আচ্ছাদন করার জন্য প্রসারিত করা যেতে পারে। একজন এমপি বা সহকর্মীর দ্বারা যৌন শ্লীলতাহানি, আর্থিক বেহাল বা নৈতিকতা লঙ্ঘন সবই ‘স্লিজ’ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য রাজনীতিবিদরা এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে থাকেন।
বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিক তার পরিবার এবং খালা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত সম্পত্তি নিয়ে বিতর্কের পর নিজেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কির স্টারমাররের নীতিশাস্ত্রের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। স্যার কির স্টারমার বলেন, ট্রেজারি অর্থনৈতিক সচিব মিসেস সিদ্দিক নিজেকে মন্ত্রী পর্যায়ের মান সম্পর্কিত স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে বলেছেন যে তিনি ‘সম্পূর্ণভাবে সঠিকভাবে কাজ করেছেন।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, টিউলিপের বক্তব্য প্রকাশের পর তার ওপর আমার আস্থা অটুট রয়েছে। সিদ্দিক জোর দিয়ে বলেছেন তিনি কোনো ভুল করেননি।
মিসেস সিদ্দিক তার খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীদের সাথে যুক্ত লন্ডনে সম্পত্তিতে বসবাস করার রিপোর্টের পর তদন্তের আহ্বানের মুখোমুখি হয়েছেন।
এ দিকে চলতি সপ্তাহে চীনে যাওয়ার কথা ছিল টিউলিপ সিদ্দিকের। কিন্তু তিনি ব্রিটিশ ট্রেজারি প্রতিনিধি দলে যোগ দিতে পারছেন না। কারণ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। টিউলিপ তদন্তে সহায়তা করছেন।
গত শনিবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিবের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পত্তি’ তিনি টিউলিপকে দিয়েছিলেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর লেবার পার্টির কয়েকজন মেইল অন সানডের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা বলেন, দুই বছর আগে যখন টিউলিপকে ওই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন যে তারা সঠিক ছিল সে তথ্য যেন প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে টিউলিপ নতুন করে কোনো মন্তব্য না করলেও তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ডেইলি মেইলকে বলেছে, ওই সম্পত্তির মালিকানা পাওয়ার ব্যাপারে টিউলিপ আগে যা বলেছিলেন, সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন। তিনি যখন ভুল বুঝতে পেরেছেন, তখনই যে সাংবাদিকরা তাকে ওই ফ্ল্যাটের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন, তাদের সঠিক তথ্য পাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানায়, টিউলিপ যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ থেকে এমএ ডিগ্রি পাওয়ার বছর ২০০৪ সালে কিংস ক্রস এলাকায় একটি ভবনের চতুর্থ তলার ওই ফ্ল্যাট পান। তখন তার বৈধ আয়ের কোনো উৎস ছিল না। ওই ফ্ল্যাটের বিপরীতে কোনো মর্টগেজ বা দাম পরিশোধ করা হয়নি। শুধু মালিকানা হস্তান্তর করা হয়।
আব্দুল মোতালিফ ২০০১ সালে এক লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে ওই ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। এর পরের বছর এপ্রিল মাসে টিউলিপের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কিভাবে ওই ফ্ল্যাট পেয়েছেন। তখন লেবার পার্টির পক্ষ থেকে ই-মেইলে দেয়া জবাবে বলা হয়, ২০ বছর আগে টিউলিপের বাবা-মায়ের যখন বিচ্ছেদ হয়, তখন তাদের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করে দেন। সেই অর্থ দিয়েই কিংস ক্রস এলাকায় তাকে ফ্ল্যাট কিনে দেয়া হয়। এই অর্থ অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে এমন কোনো ইঙ্গিত সম্পূর্ণ ভুল ও মানহানিকর।
টিউলিপের পারিবারিক বাড়ি বিক্রি করার দাবির বিষয়টি নিয়েও তখন অনুসন্ধান চালায় মেইল অন সানডে। তারা জানতে পারে, ২০০২ সাল বা এর আগে টিউলিপের পরিবার কোনো বাড়ি বিক্রি করেনি। এরপর জুলাই মাসে আবারও টিউলিপ ও লেবার পার্টিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।
টিউলিপের পার্লামেন্টারি অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো এক ই-মেইল জবাবে বলা হয়, ‘যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভুল এবং অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব তথ্য কোনো লেখায় প্রকাশ করার পরিকল্পনা করা হলে টিউলিপ আইনি পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবেন না।’
টিউলিপ এ কথা বলার পর তখন আর প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি মেইল অন সানডে।
সানডে টাইমস ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস রিপোর্ট করার পরে টিউলিপের কাছে ব্রিটেনের মন্ত্রীদের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে বসে। কারণ শেখ হাসিনার শাসনামলে টিউলিপ তার খালার মালিকানায় যুক্ত সম্পত্তিতে থাকতেন। ওই সংস্থার পর্যবেক্ষক স্যার লরির কাছে তার চিঠিতে, টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমি আমার আর্থিক বিষয় এবং বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সাথে আমার পরিবারের সম্পর্কে মিডিয়া রিপোর্টিংয়ের বিষয় অবগত হয়েছি, এটির বেশির ভাগই ভুল, আমি পরিষ্কার যে আমি কিছু ভুল করিনি। তবে সন্দেহ এড়ানোর জন্য, আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে তদন্ত করুন। আমি অবশ্যই নিশ্চিত করব যে এটি করার জন্য আপনার প্রয়োজনীয় সব তথ্য আপনার কাছে আছে।’
সানডে টাইমস জানিয়েছে যে তিনি উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করেছিলেন, যেটি তার কিশোরী বোনকে দিয়েছিলেন আইনজীবী মইন গনি, যিনি হাসিনা প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস প্রকাশ করেছে যে তিনি কিংস ক্রসের একটি অ্যাপার্টমেন্টও ব্যবহার করেছিলেন যা তাকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দলের সদস্যদের আরেক সহযোগী আবদুল মোতালিফ দিয়েছিলেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com