চলছে শীত ঋতুর মাঘ মাস, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গে নেমেছে শীত আর ঘন কুয়াশা। প্রকৃতিতে এখন শীতের আবহ, শীতের আমেজ আরও বাড়াতে যোগ হয় খেজুর রস। তাই খেজুরের রস সংগ্রহ আর গাছ চাঁছায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অঞ্চলের গাছিরা। বর্তমান জেলার হিলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রেললাইনের দুই পাশে বেড়ে উঠেছে শতশত খেজুর গাছ। এছাড়াও শহর, গ্রাম ও রাস্তা-ঘাটে খেজুর গাছ রয়েছে। শীত মৌসুম আসলেই সুস্বাদু টাটকা রস পাওয়ার আশায় গাছিরা খেজুরের গাছ পরিস্কার করে এক চাঁছ দেয়। সপ্তাহের ব্যবধানে আবার চাঁছ দেন। এভাবে তৃতীয় দফা চাঁছ দেওয়ার পর নামতে শুরু করে তাদের কাঙ্ক্ষিত রস। এ অঞ্চলে খেজুরের রস শীতকালের অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। খেজুর রসের পিঠা খাওয়া চাই সবার। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে খেজুর রসের পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। এছাড়াও মুড়ি দিয়ে টাটকা মিষ্টি খেজুরের রস খাওয়াও অনেকের পছন্দের। শীতের সকালে রস খাওয়া গ্রাম-বাংলার মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। আবার অনেক গৃহস্থ খেজুরের গুড় তৈরি করেন। হিলি-বিরামপুর রেললাইনের দুই পাশে রয়েছে কয়েকশো খেজুরের গাছ। প্রতি বছর জীবিকার তাগিদে শীত আসলেই রাজশাহী থেকে এখানে আসেন কয়েকজন গাছিরা। তারা রেললাইনের পাশে খেজুর গাছের ডাল আর পাতা দিয়ে তৈরি করেন ঘর। এই ঘরে তারা থাকেন পুরো শীত মৌসুমে। তারা শীতের শুরুতেই প্রতিটি গাছে এক থেকে তিন চাঁছ দিয়ে শুরু করেন রস নামাতে। এলাকার মানুষ টাটকা সুস্বাদু রস সংগ্রহ করতে ভির জমাই এই রেললাইনের ধারে। গাছিরা এসব রস বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি হিসেবে। আবার তারা এই রস দিয়ে তৈরি করছেন খেজুর গুড়, যার কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। রেললাইনের ধারে রস কিনতে আসা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, চলছে শীত মৌসুম। শীত আসলেই মনে পড়ে খেজুর গাছের সুস্বাদু টাটকা রসের কথা। বাড়িতে খেজুর গাছ নেই, তাই শীতের সময় রাস্তা-ঘাটে যারা রস বিক্রি করে তাদের কাছে রস কিনে নিজে খাই এবং বাড়ির জন্য নিয়ে যায়। আজকে রেললাইনে আসছি বাড়িতে রসপিঠা তৈরি করবে তার জন্য রস কিনতে। স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম বলেন, খেজুরের রস আমাদের গ্রাম-বালার একটা জনপ্রিয় খাবার। এই রস মানুষ নানান ভাবে খেয়ে থাকে। আমি কোনদিন রস কিনে খাইনি, কেননা আমার বাড়িতে দুইটি খেজুর গাছ আছে। ছোট বেলা থেকেই এই গাছের রস খেয়ে আসছি। রাজশাহী থেকে আসা গাছিরা শাহাবুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি রাজশাহীতে, এখানে আমরা দুই কাজ করছি। শীত আসলেই হিলি বিরামপুর রেললাইনের ধারের খেজুর গাছ লাগায়। এবার আমরা ১০০ গাছে কাজ করছি। প্রতিটি গাছে দুই থেকে তিন কেজি রস নামে। তবে প্রচন্ড শীতের কারণে রাত জেগে পাহারা দিতে পারি না। তাই অনেক গাছের রস চুরি হয়ে যায়। এসব রস বিক্রি করছি আবার নিজেরাই গুড় তৈরি করে বিক্রি করি। প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার রস ও গুড় বিক্রি করছি। এতে আমরা দুই জন ভালোই চলি।