মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরে মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিলে শেষ হয়েছে জলজ পাখি শুমারি- ২০২৫। এবছর বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে দেখা মিলেছে ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির। এ বিলে এবার প্রথমবারের মতো পৃথিবীর দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে- যাকে অনেকে ‘রকেট বার্ড’ও বলে থাকেন। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ পাখি শুমারি শেষ হয়েছে ১৮ জানুয়ারী শনিবার বিকালে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য ও বিশিষ্ট পাখি বিশেষজ্ঞ ড. পল থমসন জানান- বাইক্কা বিলে এবছর শীতকালীন জলচর পাখি গণনা করে ৩৮ প্রজাতির ৭ হাজার ৮৭০টি পাখির দেখা পেয়েছেন। এ সংখ্যা বিগত ২ বছরের চেয়ে বেশি। এখানে ২০২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির ৪ হাজার ৬১৫ এবং ২০২৩ সালে ৪০ প্রজাতির ৬ হাজার ১৪১ জলচর পাখির দেখা মিলেছিল। থমসন বলেন- পাখির সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। কোনো কোনো বছর ডিসেম্বর বা ফেব্রুয়ারিতে বেশি পাখি দেখা যায়। তবে, পরিযায়ী পাখির সংখ্যা নির্ভর করে জলস্তর, আগের মৌসুমের পরিস্থিতি ও পরিযায়ন পথের উপর। বাইক্কা বিলে এবছর প্রথমবারের মতো পৃথিবীর দ্রুত গতির পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন’র দেখা মিলেছে। বাইক্কা বিলের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা সিএনআরএস’র সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন- পাখি গণনাকারিরা জানিয়েছেন একটি মাত্র পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে। পাখিটি উড়ে এসে একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়ে। পেরিগ্রিন ফ্যালকন একটি বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এমন দ্রুতগতির কারণে একে রকেট বার্ডও বলা হয়। তবে, এ পাখি মাছের পাশাপাশি অন্য পাখিও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হাঁস জাতীয় পাখি তাদের প্রিয়। আর, বাইক্কাবিলে হাঁস জাতীয় প্রচুর পাখি রয়েছে। গণনায় অংশ নেয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের অপর সদস্য সামিউল মহসিন জানান- এবছর পাখি গণনায় উল্লেখযোগ্য ৭৫০ মেটে মাথা টিটি (গ্রে-হেডেড ল্যাপউইং), সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৩৯ কাস্তেচরা এবং কালা মাথা কাস্তেচরা (ব্ল্যাক-হেডেড আইবিস) ১০০ দেখা গিয়েছে। তবে, এবার বাইক্কা বিলে পাখির সংখ্যা অতীতের গড় সংখ্যার চেয়ে কম দাবি করে তিনি বলেন- ২০০৮-১০ এবং ২০১৪-১৯ সালে শীতকালে গড়ে ৯ হাজার জলচর পাখি দেখা মিলতো। সামিউল মহসিন জানান- তারা বাইনোকুলার ও টেলিস্কোপের সাহায্যে এবং তাদের পাখি গণনার সূত্র ও থিয়োরির মাধ্যমে পাখি গননা করেন। তিনি বলেন- বাইক্কা বিলের এরিয়া ১৭০ হেক্টর। এখানে মাছের অভয়াশ্রম করা হয়েছে তাই, সারা বছরই এখানে পানি ধরে রাখা হয়। হাইল হাওরের মধ্যে আরও ৬০-৭০টা বিল থাকলেও এ বিলেই বেশি পাখির দেখা মেলে। যে কারণে পাখি গণনার জন্য এ বিলটিকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। বাইক্কা বিল পরিচালনায় নিয়োজিত বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিন্নত আলী জানান- পুরো হাইল হাওরেরই পাখি থাকে। তবে, মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় বাইক্কা বিলে পাখির সংখ্যা বেশি থাকে। ৫ জন পাহারাদার পালাক্রমে বাইক্কা বিলের দেখাশোনা করেন। তবে, বিশাল এলাকা সামাল দেয়া তাদের পক্ষে কষ্টকর হয়। পরিচালনা ও অবাধ লোক সমাগম বন্ধ করতে বাইক্কা বিলে পুণঃপ্রবেশ ফি চালু করা জরুরি। তিনি বলেন- টিকেটিং সিস্টেম চালু করলে এখান থেকে সরকারও রাজস্ব পাবেন এবং এর একটা অংশ দিয়ে লোকবল বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজও করা যাবে। দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রিত হলে পাখিদের জন্যও নিরাপদ থাকবে বাইক্কা বিল।