রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

গ্রামের বাড়িতে আনুশকাহ’র দাফন সম্পন্ন, বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২১

ধর্ষণের পর হত্যার শিকার রাজধানীর কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টার মাইন্ডের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকাহ নূর আমিনের (১৮) দাফন গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া সদরের গোপালপুর গ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় জানাজা শেষে গোপালপুর গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে স্কুলছাত্রীর মরদেহ বুঝে নেয় পরিবার। সেখান থেকে মরদেহ রাত ১২টায় গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গোপালপুরে পৌছালে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মরদেহ আসার খবর পেয়ে স্থানীয়রা আগে থেকে তার গ্রামের বাড়িতে এসে ভিড় করে। এদিকে দাফন শেষে হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীকে হত্যায় প্রধান অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহানের কঠোর শাস্তিসহ এই ঘটনার সাথে আরো কারোর সংশ্লিষ্টতা থেকে থাকলে তদন্তপূর্বক তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এক ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় নিহত শিক্ষার্থী আনুশকাহ। মাস্টারমাইন্ড স্কুলে এবার মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী ছিল সে। তার মা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কম্পিউটার অপারেটর আর বাবা ব্যবসায়ী।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মাস্টারমাইন্ড স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনুশকাহকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীকে গুরুতর অবস্থায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় সহপাঠী দিহানকে (১৮) একমাত্র আসামি করে মেয়েটির বাবা ধর্ষণ ও হত্যার মামলা করেন। পরবর্তীতে দিহান ধর্ষণের পর হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
দিহানের ৩ বন্ধুকে ছেড়ে দিলো পুলিশ: রাজধানীর কলাবাগানে ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থী আনুশকাহকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তানভীর ইফতেফার দিহানের (১৮) তিন বন্ধুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, স্কুলছাত্রী আনুশকাহকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ওই তিন তরুণের জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলার বাদীরও অভিযোগ নেই। তাই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে ওই স্কুলছাত্রী আনুশকাহকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তার ‘বন্ধু’ তানভীর ইফতেফার দিহানকে একমাত্র আসামি করে কলাবাগান থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা। এ ঘটনায় দিহানের তিন বন্ধুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
এদিকে কুষ্টিয়ায় গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে স্কুলছাত্রী আনুশকাহকে। শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কমলাপুরের গোপালপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল ৭টা ৫ মিনিটে গোপালপুর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১টার দিকে ওই স্কুলছাত্রী আনুশকাহর মরদেহ ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে আসে। ভোর থেকেই শত শত মানুষ তাকে শেষবার দেখতে ভিড় করেন। মরদেহ আসার পর নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন বাবা আল আমিন আহম্মেদ। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানাজায় অংশ নিয়ে মানুষ এই হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। দাফন শেষে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকারীর দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। কমলাপুর বাজারে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন। এর আগে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে ওই স্কুলছাত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের ফলে যৌন ও পায়ুপথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, তার জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
প্রসঙ্গত, ওই স্কুলছাত্রী তার তিন ভাইবোন ও বাবা মা ধানমন্ডিতে থাকতো। সে মাস্টারমাইন্ড স্কুলে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী ছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কৌশলে বাসায় নিয়ে যায় তার বন্ধু তানভীর ইফতেফার দিহান। সেখানে বিকৃত যৌনাচারে তার রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে নেন দিহান। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন এক তরুণ। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। খবর পেয়ে নিউমার্কেট অ ল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। এরপর কলাবাগান থানার পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে ওই তরুণের তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে ওই ছাত্রীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশের এসি আবুল হাসান ওইদিন গণমাধ্যমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তরুণ দাবি করেছে, মেয়েটি তার পূর্বপরিচিত। বাসার সবাই ঢাকার বাইরে থাকার সুযোগে তাকে ডলফিন গলিতে তাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপরই মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com