বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে না সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের একমাত্র চিন্তা তারা কী করে ধনী হবে, বিদেশে বাসা করবে, বিদেশে টাকা পাচার করবে এগুলোই। গতকাল শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাস ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এক মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উচিত হবে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সেই সাথে জনগণকে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়া। তবে এই নির্বাচন হবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়।
সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলুন একবার আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করতে। কি করছেন আপনারা? আজকে যারা রাজনীতি করেন তারা নিজের দিকে একবারো তাকান না। আজকের এই সরকার জাতির সমস্ত আশা আকাক্সক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। উন্নয়ন বিএনপিও চায় কিন্তু সেই উন্নয়ন মানে সাধারণ জনগণের পকেট কেটে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া নয়।
আসন্ন পৌরসভার চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থন দেখা যায় এমনি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমারা বিশ্বাস করি যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, ভোট দিতে পারে, ভোট চুরি ও ডাকাতি করে যদি না নেয়া হয় তাহলে অবশ্যই বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করবে। বিগত পৌরসভা নির্বাচনগুলোতে সরকার দলীয় লোকেরা জোড় করে ভোট ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এমনি মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত যে কয়েকটি পৌরসভার নির্বাচন দেখেছি প্রায় বেশিরভাগ কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোট ডাকাতি করে নিয়েছে ঠিক ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতো। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।
তারা দেশকে উন্নয়নে সিঙ্গাপুর বানিয়েছে : দেশকে সিঙ্গাপুর নয়, সরকারের ডিসিরা (জেলা প্রশাসক) জামালপুর ও দিনাজপুর বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে রাজধানীর কলাবাগানের মাস্টারমাইন্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ সারাদেশে অব্যাহতভাবে নারী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলাল বলেন, এ সরকার কথায় কথায় বলে, তারা দেশকে উন্নয়নে সিঙ্গাপুর বানিয়েছে। আমরা দেখি এই সরকারের ডিসিরা জামালপুর বানিয়েছেন তার সহকর্মীকে ধর্ষণ করে। এই সরকারের ডিসিরা দিনাজপুর বানিয়েছেন তাদের সহকর্মীকে ধর্ষণ করে। সুতরাং ‘পুর’ তারা ঠিকই রেখেছেন, কিন্তু ‘সিঙ্গা’ শুধু নেই; জামাল-দিনাজ ইত্যাদি যুক্ত হয়েছে। আজ সব জায়গায় তারা তাদের এই অবস্থাটা ছড়িয়ে দিয়েছে। যেভাবে তারা সব জায়গায় নিজেদের নাম প্রচার করছে, একইভাবে এই কর্মকা-গুলোকে বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম যথাসময়ে তাদের এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার মধ্য থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশব্যাপী এই যে অনাচার, এই যে নির্যাতন, এই যে সামাজিক লাঞ্ছনা সেগুলো আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থাকে, আমাদের শত বছরের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী ঝালকাঠির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তার অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নাকি বছরের পর বছর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের সহযাত্রী ছাত্রলীগের নেত্রীদের ধর্ষণ করেছে। সেই নিয়ে হলে হলে বিক্ষোভ হয়েছে। আমরা দেখেছি সিলেটে একটি রঙ্গশালায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং জাতীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকাকে। সিলেটের এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনা ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে নোয়াখালীতে গণধর্ষণের ঘটনা থেকে শুরু করে আজ অবধি যা হচ্ছে প্রতিটি কর্মকা-ের প্রতিবাদে দেশের বিবেকবান মানুষরা জানাচ্ছে।
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা এবং বিএনপি স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।