আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। অন্যদিকে যবনিকা ঘটবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অধ্যায়ের। তাকে বিদায় অনুষ্ঠান বা ফেয়ারওয়েল দেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন পেন্টাগনে। কিন্তু পেন্টাগনের জেনারেলরা তার সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্পের এমন প্রস্তাব তারা আমলেই নেননি। এমন অবস্থায় সামনে দ্রুত সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্পের। এরই মধ্যে তিনি প্রায় ১০০ বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করতে পারেন আজ। এ বিষয়ে তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার কথা।
সময় শেষ হয়ে আসায় ট্রাম্প এই শেষ সময়ে কী করেন তা দেখার বিষয়। তবে তিনি বিদায় নিচ্ছেন নিজ দেশের তো বটেই, সারাবিশ্বের নিন্দা ও ঘৃণা মাথায় নিয়ে। কিন্তু তার আগেই তার সমর্থকরা বিভিন্ন রাজ্যে সশস্ত্র মহড়া দেখিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা থাকায় কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নিরাপত্তার জন্য সারা দেশের সব ফেডারেল প্রিজন বা জেলখানা অস্থায়ীভিত্তিতে ডাউন করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত বহাল থাকবে তা। জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত নগরী এড়িয়ে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের মেয়র ম্যুরিয়েল বাউজার। ওয়াশিংটনে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে ন্যাশনাল গার্ডসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা। কট্টর ট্রাম্প সমর্থক চরম ডানপন্থি রিপাবলিকান কংগ্রেস উইমেন মারজোরি ট্রেইলার গ্রিনের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচারের দায়ে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ট্রেইলার গ্রিন জর্জিয়া থেকে এবার প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি চরমপন্থি কিউ অ্যাননঘেঁষা। টুইটার এ নিয়ে প্রায় ৭০ হাজার এমন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার মিশিগান, ভার্জিনিয়া, ওরেগন, টেক্সাস সহ কিছু রাজ্যে ট্রাম্প সমর্থকরা সশস্ত্র অবস্থায় জড়ো হলেও কোনো সহিংসতা ঘটাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির কারণে। মিশিগানের রাজধানী লেনসিংয়ে ক্যাপিটল ভবনের সামনে বোলগো ও কিউঅ্যাননের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৭৫ জন কট্টর ট্রাম্প সমর্থক ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জড়ো হয়। তাদের অনতিদূরে বাইডেনের প্রায় অর্ধশত সমর্থকও ছিলেন প্রস্তুত। কিন্তু ন্যাশনাল গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকায় অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। ওয়াশিংটন ডিসির নিকটবর্তী ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে সিটিজেন ডিফেন্স লীগ নামের একটি সংগঠন সশস্ত্র বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়ার ফলে এই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ওহাইয়োর কলম্বাসে অবস্থিত রাজ্য ক্যাপিটল ভবনে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের সশস্ত্র লোকজন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। ওরেগন, টেক্সাস ও ওয়াশিংটন রাজ্যে বিক্ষোভ করেছে খুবই স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তি।
বেশকিছু রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন গভর্নররা, যা বহাল থাকবে অন্তত বাইডেনের শপথ গ্রহণ পর্যন্ত। সর্বত্র সতর্কাবস্থা জারি রয়েছে। এদিকে, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলারের চাপে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ এডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান কৌঁসুলি পদে ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে বিবেচিত সাবেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মাইকেল এলিসকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যদিও এনএসএ পরিচালক এই নিয়োগের বিরোধী ছিলেন। ট্রাম্পের প্রধান আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি সিনেটে অভিশংসনের ট্রায়ালে ট্রাম্পের প্রতিনিধি হিসেবে থাকতে পারেন। যদিও ট্রাম্প জুলিয়ানির ফি আটকে দিয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
সিনেটের প্রভাবশালী সদস্য লিন্ডসে গ্রাহাম ক্যাপিটল হিলে হামলায় অংশ নেয়া সন্ত্রাসীদের পারডন বা দায়মুক্তি না দিতে ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছেন। গ্রাহাম বলেছেন, এমনটা করলে ট্রাম্প ধ্বংস হয়ে যাবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামরিক কায়দায় একটি বিদায়ী ফেয়ারওয়েলের প্রস্তাব পেন্টাগন প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্প তার বিদায়বেলায় এয়ারফোর্স বেস অ্যান্ড্রুসে লালগালিচা সংবর্ধনা, সামরিক কুচকাওয়াজ, ২১ গান স্যালুট ও এয়ারফোর্স ওয়ানে ফাইটার জেটের এস্কর্ট চেয়ে সামরিক বাহিনীর কাছে আবদার জানিয়েছিলেন। কিন্তু পেন্টাগন তার অনুরোধ বিবেচনায় নেয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ইভেন্ট খুবই পছন্দ বলে জানা গেছে। যদিও এমন অনুষ্ঠানে জনগণের ট্যাক্সের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়ে থাকে। জেনারেলরা একজন প্রেসিডেন্টকে যখন এমনটা জানিয়ে দেন, তখন এটা বোঝা যায়, তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। তিনি জনগণের সমর্থন তো হারিয়েছেনই, সঙ্গে সঙ্গে তাকে চারদিক থেকে যারা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখেন, তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে এখন এ কথা বললে বাড়িয়ে বলা হয় না যে, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের বিদায় হচ্ছে অত্যন্ত বেদনার। অত্যন্ত লজ্জার।