যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনে এই প্রথম ঐতিহাসিকভাবে ৪ জন বাংলাদেশিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের এই নিয়োগে দেশে-বিদেশে সকল বাংলাদেশিরা উচ্ছ্বসিত। এই অন্তর্ভুক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আগামীদিনে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় বাংলাদেশি-আমেরিকান নতুন প্রজন্মের নবযাত্রা হিসাবে দেখছেন সবাই।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ৩৮ বছর বয়সী কাজী সাবিল আহমদ। তিনি হোয়াইট হাউসের এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট বিভাগে ইনফরমেশন এন্ড রেগুলেটরি এফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সিলর পদে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী সাবিল আহমদ ব্রুকলিন ল স্কুলের এসোসিয়েট প্রফেসর ছাড়াও ‘ডেমজ’ নামক একটি থিঙ্ক ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট।
আরেক বাংলাদেশি রোমানা আহমেদ বাইডেনের ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল ইনফরমেশনের রিভিউ প্যানেলের সদস্য পদে যোগদান করেছেন। রোমানা বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দলে কাজ করেছেন। রোমানার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউসে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন শপথ নেয়ার আট দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুসলিম নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসে তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৭৮ সালে বাবা-মার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান রোমানা। তাঁর মা নিজের একটি ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করেন। বাবা ব্যাংক অব আমেরিকায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৫ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। রোমানা জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি মায়ের সাথে ওয়াশিংটনের অদূরে ম্যরিল্যান্ডে বসবাস করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আন্ডার সেক্রেটারির চিফ অব স্টাফ পদে নিয়োগ পান নরসিংদীর মেয়ে ফারাহ আহমেদ। ফারাহ কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর এবং নিউজার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ইউএসডিএতেও কাজ করেছেন। তার পিতা ড. মাতলুব আহমেদ ও মা ড. ফেরদৌস আহমেদ। তারা দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। ফারাহ আহমেদের নানা ড. আব্দুল বাতেন খান বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান ফারাহর মামা।
এর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জেইন সিদ্দিক হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হয়েছেন। তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল’ স্কুল থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা জেইনের কর্মজীবন শুরু হয়েছে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের জজ ইলেনা ক্যাগন ও ইউএস কোর্ট অব আপিলের জজ ডেভিড ট্যাটেলের সাথে কাজের মধ্যদিয়ে। জেইন খ্যাতনামা ল’ ফার্ম ওরিক হেরিংটন এ্যান্ড সাটসলিফ এলএলপির সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন। বাইডেন-কমালা ট্র্যানজিশন টিমে ডমেস্টিক এ্যান্ড ইকনোমিক বিভাগের চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই এ নিয়োগ পেলেন জেইন। তার বাবা ডা. মামুন ও মা ডা. হেলেন দুজনই নিউইয়র্কে কর্মরত। জেইনের দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে। গত তিন দশক ধরে নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বলেন, এই সংবাদ আমাদের সকলের জন্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গৌরবের। বলা যায় এই ভূখণ্ডে আমাদের যাত্রা শুরু হলো মাত্র। আগামী দিনে আমাদের নতুন প্রজন্ম আমেরিকার মূল ধারায় তাঁদের শেকড় আরো বিস্তৃত করবে। বিশ্ব পরিমন্ডলে জাতি হিসেবে আমাদের অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবে।