দীর্ঘদিনের রোগভোগের পর হামাসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইবরাহিম আল-ইয়াজুরি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে হামাসের প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে শহীদ শেখ আহমাদ ইয়াসিনের পাশপাশি ইবরাহীম আল-ইয়াজুরিরও অবদান ছিল অনেক। হামাস প্রতিষ্ঠার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে ইয়াজুরিসহ হামাসের অনেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্যই দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর হাতে আটক হন। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২২ মার্চ যখন শেখ ইয়াসিন ইসরাইলী বিমান হামলায় শহীদ হন, তখন ইয়াজুরির ছেলে মুমিনও শেখ ইয়াসীনের সাথে ছিলেন। মুমিন নিজেও ওই ঘটনায় শাহাদাত বরন করেন।
ফিলিস্তিনকে দখল করে ইসরাইলী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিপর্যয়কর ঘটনা তথা নাকবা হয় ১৯৪৮ সালে। এর ৭ বছর আগে ১৯৪১ সালে ইয়াজুরি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জন্মেছিলেন গাজার বাইত দারাস নামক একটি গ্রামে। পুরো গ্রামটিকেই ইসরাইলী সেনারা জনমানবশূন্য স্থানে পরিণত করে। গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে রীতিমতো গনহত্যা পরিচালনা করা হয়।
শুধু বাইত দারাস নয়, ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পর মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মানচিত্র থেকে এরকম আরো পাঁচ শ’র বেশি গ্রাম ও শহরকে সম্পুর্ন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। ঘর বাড়ি আর ঠিকানা হারিয়ে ইয়াজুরি ও তার পরিবার জীবনের বড়ো একটি সময় পার করেছেন খান ইউনিস নামক উদ্বাস্তু শিবিরে। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু তহবিলের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের আওতায় ইয়াজুরি খান ইউনিস উদ্বাস্তু শিবিরেই তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়াশুনা শেষ করেন। এরপর তিনি কায়রোতে যাওয়ার একটি সুযোগ পান। ১৯৬০ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হন ইয়াজুরি। পড়াশুনা শেষ করে ১৯৬৫ সালে গাজায় ফিরে এসে নিজেই একটি ফার্মেসি চালু করেন। পাশাপাশি তিনি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন ইখওয়ানেও সময় দিতেন। সেভাবেই শহীদ শেখ আহমাদ ইয়াসিনের সাধে তার পরিচয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় হামাসের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে তিনি ভূমিকা পালনেরও সুযোগ পান।