নরসিংদীর রিকশাচালক আবদুল মালেক। ছেলে শান্তকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন পেটের চিকিৎসা করাতে। যখন চিকিৎসা শেষে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, এমন সময় জ্বর এল। চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করিয়ে দেখেন, শান্তর করোনা পজিটিভ।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন মুক্তা দাশ। হাসপাতালটি কোভিডে আক্রান্ত শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তা দাশ বলেন, ঠান্ডা লেগেছিল ছেলের, সেখান থেকে নিউমোনিয়া। বিক্রমপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ছেলের করোনা ধরা পড়ে।
প্রীতমের তো ঠান্ডা লেগেছিল। একই কক্ষে চিকিৎসাধীন আট বছরের শান্ত কিংবা নয় বছরের সালামের তেমন কোনো উপসর্গ ছিল না বলে জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকেরা।
কোভিড উপসর্গ নেই অথচ কোভিডে আক্রান্তÍএমন অনেক শিশুই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির শিশু বিভাগের প্রধান সাঈদা আনোয়ার। তিনি বলেন, যেসব শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসছে, তাদের কেউ কেউ অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে এসে কোভিড বলে শনাক্ত হচ্ছে। কেউ জ্বর, কাশিতে ভুগে আসছে, আবার কেউ আসছে ডায়রিয়া নিয়ে, কারও রোগ মারাত্মক দুর্বলতা।
তিনি বলেন, বড়দের মতোই শিশুরা কিছু ওষুধপথ্য খেয়ে আর নিয়মকানুন মেনেই ভালো হচ্ছে। তবে জটিল হয়ে যাচ্ছে সেই শিশুদের ক্ষেত্রে, যাদের আগে থেকেই হৃদ্রোগ, কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা কিংবা ধারাবাহিকভাবে ভোগায় এমন রোগ আছে। আবার অনেকে আসছে গায়ে ছোপছাপ দাগ, হাত-পা ফোলা নিয়ে, অর্থাৎ কাওয়াসাকি ডিজিজের মতো উপসর্গ নিয়ে। এ রোগের নাম এমআইএসসি (মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম বলা হয়)। এটি কোভিডের পর হয় এবং শিশুদের জন্য সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকার শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক (চিকিৎসা) প্রবীর কুমার সরকার জানান, এখন পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে ১৭০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এই হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ শিশুই এসেছিল অন্য রোগ নিয়ে। যেকোনো অস্ত্রোপচারের আগে কোভিড পরীক্ষা করা হয়। তাতেও এই রোগ ধরা পড়ে কারও কারও। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ১৫ জন রোগী মারা গেছে। এদের সাত থেকে আটজনের বয়স ২৮ দিনের কম। এই শিশুরা কিছু জন্মগত ত্রুটি নিয়েই জন্মেছিল। তবে তারা কীভাবে কোভিডে আক্রান্ত হলো, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, নবজাতকদের মায়েদের কোভিড ছিল না। তবে এখন পর্যন্ত দেশে কত শিশু আক্রান্ত হয়েছে, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক প্রবীর কুমার সরকার বলেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধের নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে। এমআইএসসিতে এই পদ্ধতি শুধু রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে না, শরীরের সুস্থ টিস্যুগুলোকেও ধ্বংস করে ফেলে। শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধে শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দেয়া ও আলো–বাতাস চলাচল করে, এমন ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। আর দুই দল চিকিৎসকই বলেছেন, শিশুদের জন্য কোভিড বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি বা ডায়রিয়া যেমন সাধারণ রোগ, তেমন সাধারণ একটি রোগ। তবে জটিল হয়ে গেলে মৃত্যু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বলছে, এমআইএসসি রোগে শিশুর শরীরের হৃৎপি-, ফুসফুস, কিডনি, মস্তিষ্ক, চামড়া, চোখ ও অন্ত্র ফুলে যায়। কী কারণে এমআইএসসি হচ্ছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কোভিড-১৯–এ যে ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়, একই ভাইরাস দেখা যায় এই রোগেও। রোগীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন। সূত্র: প্রথম আলো