আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর কৃষকরা। ধানের নেক ব্লাস্ট (শীষ মরা) রোগের আক্রমণে তারা দিশেহারা। অনেকেই এখন জমির ধান কেটে বাড়িতে আনতে চান না। চিঠার পরিমাণ বেশি হওয়ায় খড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবেনা বলে ধান কাটতে অনীহা তাদের। কৃষকদের দাবি শীষ মরা রোগে আক্রান্ত ধানের খড়ও গবাদিপশু খেতে চায় না। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫শ’ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এবছর ১৬ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়। যার মধ্যে ৩ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করা হয়। সরেজমিনে উপজেলার সোনাহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ ভরতের ছড়া, উজির পাড়া, মাহিগঞ্জ, লক্ষী মোড়, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাটেশ্বরী ব্রিজ পাড়, বেলদহ, আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের মোগলকাটা, ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের দেওয়ানের খামার, বাগভান্ডার, ঈশ্বরবরুয়া, কামাত আঙ্গারীয়া, তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাট গোপালপুর, বানিয়াটারী, পাথরডুবি ইউনিয়নের মইদাম, বাঁশজানী, শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর তিলাই, দক্ষিণ ধলডাঙ্গা ও কাঠগীর এলাকায় ব্রি-২৮ জাতের ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে চিঠায় পরিণত হতে দেখা গেছে। কৃষকদের মতে এই রোগের নাম শীষ মরা আর কৃষি অফিসের মতে নেক ব্লাস্ট। ঈশ্বরবরুয়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী জানান, ধানের শীষের গোড়ার দিকে কালো দাগ হয়, দুইদিনের মধ্যে সমস্ত শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছেনা। তিনি আরো জানান, তার এক প্রতিবেশীর এক বিঘা জমিতে ১ মণের কম ধান হয়েছে। দক্ষিণ ভরতের ছড়ার কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি, ওই জমিতে ৩/৪ মণ ধান হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অপর কৃষক শাহ আলম জানান, ৩৮ শতাংশ জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। ধানের যে অবস্থা তাতে ধান কাটা আর না কাটা একই সমান। দেওয়ানের খামারের কৃষক সফিকুল জানান, এক বিঘা ধানের অর্ধেক কেটে বাড়িতে নিয়েছি, বাকিটা জমিতেই রেখে দিয়েছি। এই ধানের খড় গরুও খেতে চায় না। অপর কৃষক রফিকুল জানান, বিঘা প্রতি ছয় মণ ধান দেয়ার চুক্তিতে তিন বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছি। শীষ মরা রোগে সমস্ত জমির ধান চিঠা হয়ে গেছে। লাভ তো দুর, খরচ উঠবে না। জমির মালিক যদি ছাড় না দেন বাজার থেকে ধান কিনে দিতে হবে তাকে। অধিকাংশ কৃষকের দাবি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করেও শীষ মরা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, নেকব্লাস্ট দমনে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ব্রি-২৮ জাতটি বর্তমান সময়োপযোগী নয়।কৃষি অফিসের তৎপরতা ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ গত বছরের তুলনায় এবছর অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। জমিতে অধিক পরিমাণে ইউরিয়া ও ডিএপি সার প্রয়োগ, পরিমাণ মতো এমওপি সার প্রয়োগ না করার কারণে নেকব্লাস্টের পরিমান বেড়ে গেছে। প্রাথমিক লক্ষ্মণ দেখা দেয়া জমিতে ৬৬ লিটার ওষুধ মেশানো পানি স্প্রে করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি অফিস থেকে। কৃষকরা সঠিকভাবে স্প্রে না করায় নেক ব্লাস্ট প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। তিনি কৃষকদের ব্রি-২৮ জাতের পরিবর্তে ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৬, ব্রি-৮৯ ও ব্রি-৯২ জাত চাষ করার পরামর্শ প্রদান করেন।