সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন

মাহে রমজান মাসের রোজার গুরুত্ব

ড. ইকবাল কবীর মোহন
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

রমজানে রোজা পালন রমজান মাসের রোজার গুরুত্ব ও প্রতিদান অপরিসীম। রোজার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫) হাজারো মাসের চেয়ে উত্তম রাত : রমজান মাসে মানবতার দিশারি হিসেবে কোরআন নাজিল হওয়ায় মাসটির গুরুত্ব বহু গুণে বেড়ে গেছে। এই মাসে যে কদরের রজনী আছে, সেই রাতকে আল্লাহ তাআলা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা করেন। রোজার উদ্দেশ্য তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন। এ প্রসঙ্গে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’
পূর্ববর্তীদের রোজা : এই আয়াতে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, রোজা শুধু সর্বশেষ উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়নি। অন্য ধর্মের অনুসারীদের ওপরও রোজা পালন করার বিধান ছিল। পৃথিবীর প্রথম নবী আদম (আ.) রোজা পালন করতেন। নুহ (আ.)-এর সময় প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখার বিধান চালু ছিল। দাউদ (আ.) তাঁর শিশুপুত্রের অসুস্থতার সময় সাত দিন রোজা পালন করেন। মুসা (আ.) এবং ঈসা (আ.) ৪০ দিন করে রোজা রেখেছেন। আমাদের প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সা.) রোজা ফরজ হওয়ার আগে মহররমের নবম ও দশম তারিখ রোজা রাখতেন। হিজরি দ্বিতীয় সালে রমজানের রোজা ফরজ হিসেবে ঘোষিত হয়। তাহলে সহজেই অনুধাবন করা যায়, মাহে রমজানের রোজা পালন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেউ কোনো কারণ ছাড়া রোজা না রাখলে সে ‘ফাসিক’ বলে গণ্য হবে। আর রোজা অস্বীকার করলে সে কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে।
রমজানে গুনাহ মাফ : মাহে রমজানের মাস তিনটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম ১০ দিন রহমত, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের সময়। রমজান মাসে আল্লাহ ঈমানদারদের জন্য অশেষ রহমত ও করুণা লাভের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেন। অতীতের সব গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ আসে রমজান মাসে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। রমজানের রাতে নামাজ আদায় করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি)

রোজাদারের মর্যাদা : একজন রোজাদার রোজা পালনের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন ও নির্মল জীবন গড়ার সুযোগ পায়। রোজাদারের মর্যাদা ও সম্মান কত বেশি, তা নবীজির একটি হাদিসে এভাবে উল্লেখ আছে, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটা দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি)
রোজার প্রতিদান : আর রোজাদারের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ বলেন, সাওম আমারই জন্য। আমি নিজেই এর বিনিময় দেব।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) মাহে রমজানের রোজা বেশি পরিমাণ সওয়াব হাসিলের মহাসুযোগ এনে দেয়। এই মাসে প্রতিটি ইবাদতে বহু গুণ ফজিলত অর্জিত হয়। তাই মাহে রমজানের প্রতিটি ক্ষণ আমাদের অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে কাজে লাগানো উচিত। সারা বছরের পাথেয়, এমনকি সারা জীবনের পাথেয় অর্জন করার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয় রোজা। রোজার মাসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের যে অনন্য উপহার ঘোষণা করা হয়েছে, তা যেন আমরা যথাযথভাবে লাভ করতে পারি, তার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। আমাদের রোজা শুধুই যেন উপবাসের শামিল না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com