শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

ভোজ্যতেলের বাজার শুধু সয়াবিনের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৪ মে, ২০২১

সত্তর দশক থেকে সরিষার তেলকে ঠেলতে ঠেলতে নব্বইয়ে এসে বাজারের বড় অংশ দখলে নেয় সয়াবিন। এখন সরিষাকে কোণঠাসা করে সয়াবিন তেলের একচেটিয়া রাজত্ব। এর মধ্যে সূর্যমুখীর তেল বা চালের কুঁড়ার ‘রাইস ব্রান অয়েলে’র মতো অনেক কিছুই বিকল্প হিসেবে বাজারে এসেছে। কিন্তু শেষমেশ কোনোটিই হালে পানি পায়নি। আর বিকল্প না থাকায় চলমান সয়াবিন তেলের ঝাঁজ সহ্য করতে হচ্ছে সব ভোক্তাকে।
একদিকে আমদানি করা সয়াবিনের দাম মেটাতে বিদেশে যাচ্ছে মোটা অংকের টাকা, অন্যদিকে সংসারের তেলের খরচ জোগাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। কারণ কয়েক বছরে বাজারে দ্বিগুণ হয়েছে ভোজ্যতেলের দাম।
দেশে সূর্যমুখী চাষ হলেও এর তেল বাজারে টিকতে পারছে না: দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিকল্প তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে এসব সমস্যার অনেকটা সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পুষ্টিচাহিদা পূরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে দেশে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া বাজারে ভোজ্যতেলের সিন্ডিকেট, সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা বলতে আমরা যা শুনি, সেগুলো কমবে নিজের উৎপাদিত তেলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হলে।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত হবে তেলচাষিদের পর্যাপ্ত প্রণোদনা দেয়া। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের উৎপাদিত তেল সংরক্ষণ ও বিপণনের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে তেলবীজ চাষের জমি স¤প্রসারণ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে পুরো বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। যদিও এর পরিমাণ নিয়ে অন্যান্য সংস্থার তথ্যে ভিন্নতা রয়েছে। তবে সব সংস্থার তথ্য বলছে, চাহিদার সিংহভাগ তেল আমদানি করা হয় এবং কিছুটা দেশে উৎপাদন হয়। ফলে তেলের জন্য বাংলাদেশকে প্রতি বছর অনেক টাকা গুনতে হচ্ছে।
বাজারে এখন সরিষার তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম কম: জানা গেছে, ২০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দেশে তেলজাতীয় শস্য উৎপাদন হচ্ছে ১০ লাখ টন। এখান থেকে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ লাখ টন। ফলে দেশে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউয়ে বলা হয়েছিল, ঘাটতি তেল আমদানি করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশকে সবমিলিয়ে ১১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, সেই হিসাবে গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে খরচ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ হয়। আর এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র চার ভাগ এ জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে।
এছাড়া দেশে সামান্য পরিমাণ যে সয়াবিন উৎপন্ন হয়, তা থেকে তৈরি হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য তৈরি হয় বেশি। আমদানি করা সয়াবিন থেকেও ‘বাই প্রোডাক্ট’ হিসেবে তেল তৈরি হয়। তথ্য বলছে, বিগত মৌসুমে ৭ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর জমিতে তৈলবীজ ফসলের চাষ করে ৯ দশমিক ৭০ লাখ টন ফসল উৎপন্ন হয়। এ পরিমান প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৯ থেকে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে সরিষা। গত বছর দেশে মোট ৪ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬ দশমিক ৫ লাখ টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২ দশমিক ৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন নগণ্য বলে বাজারে এখন সরিষার তেলের দাম আরও বেশি, যা সয়াবিনের দ্রুত জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ। বাজারে অবশ্য এখনো সরিষার তেলের তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম কম। ফলে সরিষার তেলের উৎপাদন বড় পরিসরে বাড়ানো সম্ভব না হলে এখন সয়াবিনের বাজার ধরা সম্ভব নয়। সুবিধা করতে পারেনি রাইস ব্র্যান অয়েল : এসব তেলের বাইরে ২০১২ সালে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে দেশে যাত্রা শুরু করে চালের কুঁড়া থেকে উৎপাদিত ভোজ্যতেল রাইস ব্র্যান। কিন্তু এক দশকের ব্যবধানে এই তেল সুবিধা করতে পারেনি। মাঝে চাহিদা কিছুটা বাড়লেও অন্য তেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে রাইস ব্র্যান অয়েল। এখন লোকসানে পিছু হটতে শুরু করেছেন এই তেলের বাণিজ্যিক উৎপাদকরা।
শুরুতে কয়েক বছরের মধ্যে গোটা দশেক প্রতিষ্ঠান রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করেছিল। শেষ পর্যন্ত দুই ডজন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। মাঝে সয়াবিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে যাওয়া এই তেল নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে এক নম্বরের আসনটি দখল করে নেয়ারও সম্ভাবনার কথা বলেন অনেকে। কিন্তু এখন ব্যবসা করতে পারছে না কেউই। সয়াবিনের থেকে চড়া দাম, চালের কুঁড়া সংগ্রহে সমস্যা, স্বাদে কিছুটা ব্যতিক্রম ও প্রচার-প্রচারণার অভাবে থমকে গেছে রাইস ব্র্যান অয়েলের বাজার।
তেল আছে আরও দুই প্রকার, কিন্তু চল নেই: দেশে আরও দুই ধরনের ভোজ্যতেল আছে; জলপাইয়ের তেল ও কার্পাস তুলার বীজ থেকে উৎপাদিত তেল। তবে এগুলোর চল বা ব্যবহার খুব সীমিত। এর মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও জলপাইয়ের তেল তৈরি হলেও, বাজারে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জলপাইয়ের তেল বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এই তেলের দামও বেশ চড়া। স্বাস্থ্য সচেতন এবং সামর্থ্যবানরাই এর ক্রেতা।
এছাড়া কার্পাস তুলার বীজ থেকে তেল উৎপাদনের জন্য কুষ্টিয়ায় বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। এই তেল পরিশোধন করে খাবার উপযোগী করার জন্য রয়েছে আলাদা একটি কারখানা। সেখানে বছরে প্রায় ৫০০ টন তেল উৎপাদন হয়। কিন্তু দেশে তুলার মোট উৎপাদন কম হওয়ায় ব্যতিক্রমী এই ভোজ্যতেলকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সমৃদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তেলের উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার: সরকার দেশে তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি ব্যয় কমানোর কথা দীর্ঘদিন ধরে বলছে। এ জন্য গত বছর ২৭৮ কোটি টাকার ব্যয়ে ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
বাজারে সয়াবিন তেলের একচেটিয়া রাজত্ব: ২০২৫ সালের মধ্যে তেলজাতীয় ফসলের স¤প্রসারণ এবং উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ ও আমদানি ব্যয় কমানোই ওই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বর্তমান তেলবীজ (সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন) আবাদি এলাকা ৭ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে কাজ করছে।
এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত তেলবীজের আধুনিক প্রযুক্তির স¤প্রসারণ, মৌ-চাষ অন্তর্ভুক্ত করে তেলজাতীয় বীজের হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানো, ব্লকভিত্তিক কৃষক দল (৭ হাজার ৫৭২ টি) গঠনের মাধ্যমে কৃষি স¤প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার ও টেকসই করা, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত প্রজনন বীজ ব্যবহার করে প্রকল্প মেয়াদে বিএডিসি কর্তৃক ১ হাজার ৫২ দশমিক ৩২ টন ভিত্তিবীজ উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করায় কাজ করছে প্রকল্পটি।
যৌথ প্রকল্প চলছে আরও একটি: ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমেও তেলের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে এ প্রকল্প তেলের জন্য একক নয়। এতে ডাল ও মসলা যুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটির চলমান তৃতীয় পর্যায় (১ম সংশোধিত) শেষ হবে আগামী বছর।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। তবে প্রকল্পের মূল কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৩ সালের মধ্যে তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে ১২ দশমিক ০৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে সম্ভব হবে।
প্রকল্পটির পরিচালক খায়রুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে বীজ উদ্যোক্তা তৈরি; সেটা সম্ভব হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে চার হাজার বীজ উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তাদেরকে আমরা ক্ষুদ্র-মাঝারি বীজ উদ্যোক্তা বলছি।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। তাদেরকে বীজের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। তারা শুধু বীজ উৎপাদন নয়, নিজেরা বীজ সংরক্ষণ এবং বাজারজাত করছেন। তেলবীজ সহ অন্যান্য বীজ উৎপাদনে প্রকল্পটি অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে।-জাগোনিউজ.২৪কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com