শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

জাকাত আদায় না করার কুফল

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১

জাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের তৃতীয় স্তম্ভ। কুরআন মাজিদের ৮২টি আয়াতে সালাতের সাথে জাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মহানবী সা: অসংখ্য হাদিসে জাকাতের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। জাকাত এক দিকে দুস্থ মানবতা প্রতিপালনের একটি উপায়, অপর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। জাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্র হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া, ক্রমোন্নতি হওয়া।
জাকাত আদায়ের সুফল : জাকাত আদায় করার মধ্যে রয়েছে অগণিত ফায়দা।
১. মুত্তাকির নিদর্শন : জাকাত আদায় করা মুত্তাকি হওয়ার অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- এ কুরআন মুত্তাকিদের জন্য নির্দেশ। মুক্তাকি হলো আর যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি যা কিছু তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর রাহে) ব্যয় করে (সূরা বাকারা-৩)। ২. সত্যের সাক্ষী : যিনি সত্যের সাক্ষীদাতা হবেন তার মধ্যে তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। ১. সালাত কায়েম করা, ২. জাকাত প্রদান করা ও ৩. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করা। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন- তিনি তোমাদের নামকরণ করেছেন মুসলিম এবং এই কিতাবেও যাতে রাসূল সা: তোমাদের জন্য সাক্ষী হতে পারেন এবং তোমরা অন্যান্য মানবজাতির জন্য সাক্ষী হতে পারো। সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করো (সূরা হজ-৭৮)।
৩. সফলতার উপায় : জাকাত ব্যক্তির মনকে ধন-সম্পদের আসক্তি, দুনিয়াপ্রীতি, অপরের প্রতি হীনপ্রবণতা ইত্যাদি থেকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখে। ফলে সে উভয় জাহানে সফলতা লাভ করে। আল্লাহ বলেন, অবশ্যই (ওই সব) মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনম্র হয়, যারা অসার ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকে এবং যারা জাকাত প্রদানে সক্রিয় হয় (সূরা মু’মিনুন : ১-৪)।৪. চিরস্থায়ী শান্তি লাভ : জাকাত প্রদানের ফলে পরকালের চিরস্থায়ী শান্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর বাণী- নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকর্ম করে, সালাত কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে এবং তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না (সূরা আল বাকারা : ২৭৭)।
৫. আত্মা পরিশুদ্ধি করার মাধ্যম : কৃপণতা, লোভ-লালসা ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তির মতো হীনপ্রবণতা ও প্রবৃত্তি থেকে হৃদয়-মনকে পরিশুদ্ধ করে জাকাত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তাদের সম্পদ থেকে সাদকা গ্রহণ করুন, তার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করুন এবং তাদেরকে পরিশোধিত করুন।(সূরা তাওবা: ১০৩)।
৬. বঞ্চিতদের প্রতিপালন : আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ কেবল ব্যক্তির ভোগের জন্যই নয়, বরং তাতে সমাজের নিঃস্ব, বঞ্চিত, হতভাগ্য, গরিব ও প্রার্থীর অধিকার রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে (সূরা মা’আরিজ : ২৪-২৫)।
এছাড়া জাকাত দেয়া নবী রাসূলদের একটি আমল। জাকাত আল্লাহর সাথে বান্দার লাভজনক ব্যবসা। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।
জাকাত অনাদায়ের কুফল : জাকাত আদায় না করলে দুনিয়া ও আখিরাতে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
১. কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য (ধন-সম্পদ) পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। বিচার দিবসে জাহান্নামের অগ্নিতে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে, সে দিন বলা হবে এটি সেটি, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে (সূরা তাওবা: ৩৪-৩৫)। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন- কোনো সঞ্চয়কারী তার সম্পদের জাকাত না দিলে সেই সম্পদকে দোজখের আগুনে দগ্ধ করে চওড়া ধাতব পৃষ্ঠা বানিয়ে তা দিয়ে তার দুই পাজরে ও কপালে ততক্ষণ পর্যন্ত সেঁকা দেয়া হতে থাকবে যতক্ষণ ৫০ হাজার বছরব্যাপী দিনে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিচার ফায়সালা সম্পন্ন না করবেন। অতঃপর তাকে জান্নাত বা জাহান্নামের দিকে পথ দেখিয়ে দেয়া হবে (আহমদ, বুখারি, মুসলিম)। মহানবী সা: বলেছেন- যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত প্রদান করে না কিয়ামতের দিন তার সম্পদ বিরাট অজগরে রূপান্তরিত হয়ে তার গলায় গলান্ধনীর মতো পেঁচিয়ে থাকবে (সুনানে আন নাসাঈ : ১ম খণ্ড পৃ. ৩৩, সুনানে ইবন মাজাহ : পৃ. ১২৮)।
২. ক্ষতিকর বস্তু নিজের সাথে রাখা হয় : জাকাত না দেয়ার অর্থ ক্ষতিকর বস্তু সাথে রাখা। তাই মহানবী সা: বলেছেন- যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত প্রদান করল সে তার ক্ষতিকর বস্তু দূর করে দিলো (কানজুল উম্মাল : হাদিস নং ১৫৭৭৮, তাবারানি)।
৩. দায়িত্বমুক্ত হয় না : জাকাত হলো আর্থিক ফরজ ইবাদত। যে ব্যক্তি তা প্রদান করল না সে দায়িত্বমুক্ত হলো না। মহানবী সা: বলেছেনÑ যখন তোমার মালের জাকাত প্রদান করবে, তোমার ওপর যে দায়িত্ব চেপে বসেছিল তা থেকে রেহাই পেলে।(জামিউত তিরমিজি, ইবনু মাজাহ)।
৪. বৃষ্টি বন্ধ হয় : নবী সা: বলেছেন- ৪টি আচরণে ৪টি অবস্থার সৃষ্টি হয়। ক. যখন কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাদের ওপর শত্রুপক্ষকে বিজয়ী করে দেয়া হয়। খ. যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না, তাদের মধ্যে খুন-খারাবি বেড়ে যায়, গ. যখন কোনো জাতি জাকাত প্রদান বন্ধ করে দেয় তখন তাদের জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়, ঘ. যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কম দেয়, তখন তাদেরকে দুর্ভিক্ষের কবলে ফেলে দেয়া হয় (তাবারানি)।
৫. আগুনের ডান্ডাবেড়ি পরানো হবে : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন যারা আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহের দানন নিয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন তাদের এ কার্পণ্যকে তাদের জন্য কল্যাণকর মনে করে। বরঞ্চ তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। তাদের যে সম্পদ নিয়ে তারা কার্পণ্য করত তথা জাকাত দিতো না, তাকে কিয়ামতের দিন দোজখের আগুনে পুড়িয়ে ডান্ডাবেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় পরানো হবে (সূরা আল ইমরান : ১৮০)।
লেখক : প্রধান ফক্হি, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com