শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে অনশন করছেন তাসলিমা আক্তার মনি(২২) নামে এক নারী। মঙ্গলবার সকাল থেকে মেয়েকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কয়েক দফা মারধর করেছে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অসুস্থ্য অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। স্থানীয়রা জানায়, নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের জালিয়াহাটি গ্রামের রাজ্জাক ছৈয়ালের ছেলে ইতালি প্রবাসী শাহ আলম ছৈয়ালের(২৮) সঙ্গে একই গ্রামের রাজ্জাক শেখের মেয়ে তাসলিমা আক্তার মনি ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বেশ কয়েকদিন ভালোই চলছিল তাদের পারিবারিক জীবন। ৪ মাস পর ইতালিতে কাগজপত্র ঠিক করতে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী শাহ আলম ছৈয়াল। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দেয় মনির বাবা মনির বাবা রাজ্জাক শেখ। পুনরায় দুই লাখ টাকা দাবি করে। এ দিতে অস্বীকার করলে মনির উপর নেমে আসে অমানসিক অত্যাচার ও নির্যাতন। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান মনি।শুধু তাই নয় তাসলিমা আক্তার মনি কালো বলে বর্তমানে স্বামী শাহ আলম ডিভোর্স দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। উপায়ান্ত না দেখে অন্ধকার দেখে গত মঙ্গলবার ৫ বছরের মেয়ে ইকরাকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বারান্দায় ও একটি রুমে অনশন শুরু করেন। অনশনে থাকলে শাশুড়ী বিমলা বেগম দেবর রাকিব ছৈয়াল ননাস নাজমা বেগম ও বেগম আক্তার তাকে কয়েক দফা মারপিট করে। মার থেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সন্ধ্যায় অসুস্থ্য অবস্থায় মনির বাবা রাজ্জাক শেখ ও স্থানীয় লোকজন তাকেউদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে সে সদর হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। এ ব্যাপারে তাসলিমা আক্তার মনি বলেন, স্বামীর বাড়িতে আসলে আমার শ্বাশুড়ি বিমলা বেগম দেবর রাকিব ছৈয়াল, ননাস নাজমা বেগম ও বেগম আক্তারসহ বাড়ির লোকজন আমাকে মারধর করেছে। আমি আমার স্বামীর অধিকার নিয়ে এসেছি।আমাকে স্বামী ডিভোর্সের ভয় দেখায়। আমারতো স্বামীর বাড়িতে থাকার অধিকার আছে। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই। স্বামী ইতালিতে থাকেন। তার পরিবার যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা চায় ও আমি কালো বলে স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়। তাই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসছিলাম।মনি আক্তারের বাবা রাজ্জাক শেখ বলেন, বিয়ের পর শাহ আলমকে মেয়ের সুখের জন্য যৌতুক হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। ছয় ভরি স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়েছি। তাতে মন ভরেনি। এখন আবার দুই লাখ টাকা চায়। আমি গরিব টাকা দিতে পারছি না তাই মেয়েকে মারধর করেছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। শাহ আলম ছৈয়ালের মা বিমলা বেগম মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, বউ মনি আমার মেয়েদের ও ছেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আমাদের কথা শোনে না। একটি অনুষ্ঠানে যাবে আমার মেয়ে তাই তার গয়না চেয়েছে দেয়নি। তাই আমরা তাকে বউ হিসেবে মানি না। আমার বাড়িতে তার কোনো যায়গা নেই। আমরা কেউ তাকে মারধর করিনি। নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) অবনী শংকর কর বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।