শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন

সবাই বলছে দিবে কিন্তু টিকা তো হাতে আসছে না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের অক্সফোর্ড -অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন দেশকে টিকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবাই বলছে টিকা দিবে কিন্তু কবে দিবে সেটা বলছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের কাছে ঔষধ সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার ওই অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার অনেক টিকা আছে জেনে সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুরোধ করলাম। পরে জানা গেল, করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম বলে যে দেশগুলোতে টিকা দেয়া হবে তা অগ্ৰাধিকারের তালিকায় নেই। পরে অবশ্য আমরা জেনেছি আমাদের কিছু অ্যাস্ট্রাজেনেকা দিবে। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও কিছু টিকা পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু কবে পাবো সেটা বলেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আমরা খুবই আশাবাদী। প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্র কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন দেশে যে টিকা দিচ্ছে, তাতে অগ্ৰাধিকার তালিকায় আছে বাংলাদেশ। খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের উপহারের এ টিকা বাংলাদেশ আসবে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার।
করোনার টিকা সার্বজনীন করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকে বলে আসছেন টিকা যেন সার্বজনীন পণ্য এবং সব দেশের লোকের বৈষম্যহীনভাবে তা পাওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোট টিকার ৯৯ দশমিক শতাংশ আছে ধনী দেশের কাছে এবং মাত্র শূন্য দশমিক তিন শতাংশ গরীব দেশগুলোর কাছে। অনেকে টিকার জন্য হাহাকার করছে। অস্ট্রেলিয়ার ২৫ মিলিয়ন লোকের জন্য ৯৩ দশমিক আট মিলিয়ন টিকা মজুত থাকার রিপোর্ট পেয়েছেন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের কাছেও টিকা চেয়েছি। তারাও বলেছে দিবে। কিন্তু কবে দিবে সেটাই দেখার বিষয়।
জীবন বাঁচাতে কভিড রোগীপ্রতি ব্যয় ৩ থেকে ৮ লাখ টাকা: কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জীবন বাঁচাতে জনপ্রতি চার মাসে অর্থনৈতিক ব্যয় প্রায় ৪ হাজার থেকে ৯ হাজার ৫০০ ডলার। ৮৫ টাকা বিনিময় হারে বর্তমানে যার মূলমান ৩ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৮ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশনস-২০২১: নরমালাইজিং মাস্কস-হেলথ অ্যান্ড ইকোনমিক ইমপ্লিকেশনস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে গত বুধবার এ তথ্য উঠে আসে। অর্থনৈতিক ব্যয়ের মধ্যে থাকে আর্থিক ব্যয়, সুযোগ ব্যয়সহ বিভিন্ন খরচ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে একজন রোগীর পেছনে এ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আহমেদ মুশফিক মোবারক ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এ সময় করোনা মহামারী মোকাবেলায় করণীয়সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা অনিয়ম ও অদক্ষতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
ওয়েবিনারে সীমান্ত এলাকায় স¤প্রতি নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বক্তারা বলেন, এতে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলেও কভিড ছড়িয়ে পড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় গ্রামের বাসিন্দাদের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ সীমিত। শহরবাসীর মতো তারা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ও অক্সিজেন পাবে না। গ্রামের হাসপাতালগুলোর যে সক্ষমতা, এতে অল্প কয়েকজন রোগীতেই সেগুলো উপচে পড়বে। এছাড়া এসব এলাকায় ব্যাপকভাবে টিকাদান শুরু করতেও কয়েক মাস লেগে যাবে। তাই চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর গ্রামে নতুন ঢেউ সামাল দিতে মাস্ক পরার মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় মাস্ক ব্যবহারকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরের কৌশল বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়। মাস্ক পরার অভ্যাসকে সামাজিক রীতিতে রূপ দিতে হবে।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, দেশের মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে, এটি মোটেও কাম্য নয়। সীমান্ত এলাকায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দুটোই বাড়ছে। আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দিকে সবার নজর ছিল। এজন্য করোনা সংক্রমিত অঞ্চলগুলো থেকে ঢাকায় গণপরিবহন পরিচালনা ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। এসব এলাকা থেকে কেবল মালপত্র পরিবহন অব্যাহত থাকতে পারে। কিন্তু গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া উচিত।
ওয়েবিনারে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিওস ইনোভেশন ফর পভার্টি অ্যাকশন, গ্রিন ভয়েস এবং এটুআই কর্মসূচি ও ব্র্যাকের উদ্যোগে পরিচালিত একটি গবেষণার ওপর আলোচনা হয়। বাংলাদেশের ৬০০ গ্রামের সাড়ে তিন লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। সে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করে ড. আহমেদ মুশফিক মোবারক বলেন, চারটি কর্মসূচির যৌথ সমন্বয়ে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার ফলে মাস্কের ব্যবহার ২৯ শতাংশ হারে বাড়ে। এটি ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত টেকসই হয়। ফলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ে। চারটি কাজ বিশেষ করে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ, সঠিকভাবে মাস্ক পরা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে ও অন্যান্য উপায়ে রাস্তায় বা জনপরিসরে চলাচলকারী ব্যক্তিকে সঠিকভাবে মাস্ক পরার কথা মনে করিয়ে দেয়া ও স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে মাস্ক পরার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা। এ পদ্ধতিতে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অভ্যাসও বেড়েছে।
ড. আহমেদ মুশফিক মোবারক বলেন, এখন গ্রামের ১৩ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে। ৮৭ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে না বা করতে চায় না। তবে গবেষণা থেকে উঠে আসা চারটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারলে মাস্ক পরার হার ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এ সময় ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধ বা লকডাউন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ পদ্ধতি সঠিকভাবে কার্যকর নয়, এছাড়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ব্র্যাক এরই মধ্যে ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষের কাছে বিনা পয়সায় সার্জিক্যাল মাস্ক পৌঁছে দিয়েছে। স¤প্রতি সীমান্ত এলাকা থেকে করোনা ধেয়ে আসছে। সেটি প্রতিরোধ করতে হবে। সার্বিকভাবে এ মুহূর্তে আরো সাড়ে পাঁচ কোটি সার্জিক্যাল মাস্ক প্রয়োজন। এটি তৈরিতে খরচ পড়বে ২৫ কোটি টাকা। মাস্ক বিতরণ বা এ-সংক্রান্ত কর্মসূচিতে সরকারের কোনো বরাদ্দ নেই। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে চাওয়া হলেও সেইমতো অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার বিস্তৃতি প্রতিরোধ কমিউনিটির সম্পৃক্ততা ছাড়া অসম্ভব। এজন্য প্রতিটি ঘরে সামাজিক দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।
তবে এ মুহূর্তে স্বাস্থ্য খাতে টাকা কোনো সমস্যা নয় বলে উল্লেখ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষকে মাস্ক পরতে দেখা যায় না। অভিযান পরিচালনা, বল প্রয়োগ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও মানুষকে মাস্ক পরানো যায়নি। মাস্ক বিনা পয়সায় দেয়া হবে। কিন্তু বিতরণ করবে কে? বিতরণ করতে গিয়ে ১০ টাকা করে খরচ হবে। তাই মাস্কের পরিবর্তে সরকার টিকার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। মাস্ক কিনতে যে ২৫ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে, সেটি কোনো টাকাই নয়। এখন স্বাস্থ্য খাতে টাকা কোনো সমস্যা নয়, বরং চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিতরণ ও ব্যবস্থাপনায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, অনেকে এসব অনিয়মের সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পৃক্ততার কথা বলছেন। কিন্তু মন্ত্রী কতটুকু জড়িত আছেন সেটি দেখতে হবে। মন্ত্রীর পাশাপাশি সেখানে অন্যদেরও দায়িত্ব থাকে। তারা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন কিনা, সেটাও দেখা দরকার। তিনি আরো বলেন, মাস্ক দরকার তবে ভ্যাকসিন অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিস। এজন্য সরকার টিকার ওপর জোর দিচ্ছে।
সীমান্তবর্তী হাসপাতালে সক্ষমতা বাড়াতে হবে: করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট) কমিউনিটি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণেই হঠাৎ একদিনে আড়াই হাজারের ঘর অতিক্রম করেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। আইইডিসিআরের তথ্য অনুসারে এমন কিছু মানুষের নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যাদের ভারতে ভ্রমণ করার ইতিহাস নেই। প্রথম দিকে বিপজ্জনক এই ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব কেবল ভারতফেরত আক্রান্তদের মধ্যেই পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন রাজধানীতেও চলে এসেছে ভারতীয় করোনার ধরন। জিনোম সিকোয়েন্স আরো বাড়ানো হলে আরো বেশি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যেত বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি ইউকের কেন্ট করোনা ধরনের চেয়েও ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ দ্রুততার সাথে মানুষকে আক্রান্ত করে থাকে। ফলে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এখনকার চেয়ে আরো বেশি টেস্ট করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২০ হাজার ৫৮৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে গতকাল করোনা শনাক্তের হার ছিল ১২.৩৩ শতাংশ। গত মঙ্গলবার শনাক্তের হার ছিল ১২.১২ শতাংশ। চিকিৎসকরা বলছেন, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বেড়ে যাওয়ার কারণে আরো অনেক বেশি নমুনা একদিনে পরীক্ষা করা সম্ভব। যত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে তত বেশি সংক্রমিতদের শনাক্ত করা সম্ভব।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত সংলগ্ন হাসপাতালগুলোর করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ভারত থেকেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তরা আসছে বেশি। ফলে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন সবগুলো উপজেলা হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া যেখানে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি সেখানে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনে যেতে হবে।
তিনি বলেন, করোনায় অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদেরও আক্রান্ত করে কিন্তু এদের মৃত্যু হয় না। মোট জনসংখ্যার যে ২০ শতাংশের বয়স ৬০’র ঊর্ধে তাদের বেশি সমস্যা হয় এবং এ বয়সীদের মধ্যেই মৃত্যু বেশি। এ বয়সী লোকদের সংক্রমণের সাথে সাথে চিকিৎসা শুরু করে দিতে পারলে তাদের নিরাপদ করা সম্ভব যদি উপজেলা হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয় এবং অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন মাস্ক ও হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলার ব্যবস্থা করা যায়। কারণ এখনকার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে ফুসফুসের ক্ষতি হতে শুরু করে। ফলে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সে জন্য শুরু থেকেই চিকিৎসা শুরু করে দিতে পারলে বৃদ্ধ মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এ জন্য উপজেলা হাসপাতালগুলোকে শুধুমাত্র অক্সিজেন, মাস্ক ও নেজাল ক্যানোলা দিয়ে সজ্জিত করলেই হবে।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার অনুযায়ী জেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ, এইচডিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে পারলে জটিল রোগীগুলোকে সেখানে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সীমান্ত এলাকার হাসপাতালগুলোতে এই ব্যবস্থাগুলো হয়ে যাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য উপজেলা হাসপাতালকে এই ব্যবস্থাগুলো দিয়ে সজ্জিত করতে পারলে মৃত্যু কমে যাবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারলে করোনা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমে যাবে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটি খুব তাড়াতাড়ি নির্মূল হয়ে যাবে না। করোনা টিকা ব্যবস্থা করতে পারলেও দেশের সব মানুষকে টিকা দিতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া অক্সিজেন, মাস্ক, নেজাল ক্যানোলা, আইসিইউ, এইচডিইউ, ভেন্টিলেটর যে শুধু করোনা রোগীদের জন্য প্রয়োজন হয় এমন নয়, অন্যান্য জটিল রোগেও রোগীদের এই যন্ত্রগুলোর প্রয়োজন হয়। এই যন্ত্রপাতি ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নয়ন হবে।
খুলনা বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে । সেই সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। এর মধ্যে করোনায় ছয়জন এবং উপসর্গ নিয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৩০ জন।করোনা ইউনিটের ফোকালপারসন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বুধবার সকাল পর্যন্ত খুলনা করোনা হাসপাতালে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ছয়জন এবং উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তি আছে ১৩০ জন রোগী। খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, মঙ্গলবার রাতে খুমেকের পিসিআর মেশিনে ২৭৯ নমুনায় ৮১ জনের পজিটিভ এসেছে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, খুলনায় মোট নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার) খুলনা জেলা ও মহানগরীর তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সমাকে) হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গত বুধবার ভোর রাত ১টার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নৈকাটি গ্রামের মৃত কাঁলাচান শেখের ছেলে আব্দুস সামাদ শেখ (৫৫), একই উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত মাজেদ বক্সের ছেলে এলেন বক্স (৮০), সদর উপজেলার আখড়াখোলা গ্রামের মৃত বাকের আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৫০) ও শহরের রাজারবাগান এলাকার মৃত পুনাই মিস্ত্রীর ছেলে নাসির আলী মিস্ত্রি (৭০)। এ নিয়ে জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২৩৬ জন ব্যাক্তি। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অর্ধশতাধিক।
প্রসঙ্গত সাতক্ষীরায় লকডাউন চলছে। তারপরও করোনা সংক্রমণের হার কমেনি। গতকাল সংক্রমণের ঊর্ধগতি ছিল। সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ১৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় সাতক্ষীরায় করোনা শনাক্তের হার ৫৯.৩৪ শতাংশ। শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ প্রহরায় লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হলেও গতকাল শহরে জনসমাগম বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যেই শহর ও গ্রামের মধ্যে যাতায়াত অব্যাহত আছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com