শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন

সরকারকে না হঠালে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলয়াতনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ফরহাদ মাজহার

বিএফইউজে ও ডিইউজের আলোচনা সভায় বক্তারা 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে হঠাতে না পারলে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা। সংবাদপত্রের কালো দিবসের আলোচনা সভায় তারা একথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হল রুমে (তৃতীয় তলা) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএফইউজে সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএফইউজে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত ও রাশেদুল হক, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য এ এক এম মহসীন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার।
কলামিস্ট, সমাজচিন্তক ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার দেশে গুম হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান নেই উল্লেখ করে বলেন, যারা এ সরকারের বিরোধিতা করছে তারাই গুমের শিকার হচ্ছেন, আইন বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চেতনা যতো দৃঢ় হচ্ছে সরকারের দমননীতি ততো জোরালো হচ্ছে। সর্বশেষ ইসলামী বক্তা আদনান গুমের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আদনানের বক্তব্য তরুণদের আকৃষ্ট করার কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে গুম করেছে। ফরহাদ মজহার বলেন, গণআন্দোলন ও গণবিক্ষোভ জনগণের অধিকার। কিন্তু এ সরকার সেটি হরণ করেছে। তিনি বলেন, গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান সরকার গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই নয় সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকারের অপশাসনে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ সরকারকে হঠাতে না পারলে দেশ বাঁচানো যাবে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা না পারলে অন্তত এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ন্যায় যুগপৎ আন্দোলন করতে পারে। মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি ইসরাইলে সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, দেশে এখন পুলিশি শাসন চলছে। কোথাও আওয়ামী লীগের শাসন নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো কোন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে এ সরকারকে বিদায় করতে সবাইকে এক সাথে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, কেবল আওয়ামী লীগই জানে কিভাবে আন্দোলন করতে হয়। একথা মোটেও সত্য নয়। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯ গণঅভূত্থান, ৭১’ র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ গণঅভূত্থানে আওয়ামী লীগের কোন অবদান নেই। তবে আওয়ামী লীগ নৈরাজ্য সৃষ্টিতে বেশ পারঙ্গম।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রয়োজনে নতুন করে ইতিহাস বানিয়ে তা প্রচার করে বেড়ায়। আমার কাছে আজ ভালো লাগছে নতুন প্রজন্মের অনেকে আজ চমৎকারভাবে অতীত ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কথা যদি বলা যায় ৭৫’র ১৬ জুনের কথা কেন বলা যাবে না? আমাদের বীরত্বগাঁথার কথা যেমন বলতে হবে; তেমনি ভুল-ভ্রান্তির কথাও বলতে হবে। আর তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের পথ চলতে হবে। ১৬ জুন যা ঘটেছে একটা সভ্য দেশে তা কল্পনা করা যায় না।
আওয়ামী লীগকে সভ্যতা বিনাশী দল উল্লেখ করে শওকত মাহমুদ বলেন, সভ্যতা ফিরে পেতে চাইলে এ সরকারকে বিদায় করতে হবে। তিনি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে বলেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালাকানুন করে বাক স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বিচার বিভাগের নির্লিপ্ততায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আরো বলেন, আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ সংবাদপেত্রর স্বাধীনতা, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের স্বাধীনতা বা চিন্তার স্বাধীনতার পক্ষে কোন আইন নেই। মিথ্যে মামলায় সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হলেও বিচার বিভাগ থেকে তার মুক্তি মিলে না। তিনি বলেন, আমাদের পার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারতে প্রেস ফ্রিডম না থাকলেও ওই দেশের বিচারপতিরা সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় সাংবাদিক আটককে অবৈধ ঘোষণা করে বলেছেন, ‘সরকারের সমালোচনা করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়’।
সভাপতির বক্তব্যে এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘৭৫-এর ১৬ জুন সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়ার কারণে ‘কালো দিবস’ পালন করা হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে গাঢ় কালো দিবস কোন্্টি সেটি এখন বাছাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বন্ধ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন, দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও বয়োবৃদ্ধ সম্পাদক আবুল আসাদ এবং ব্যারিস্টার মাইনুল হোসেনকে গ্রেফতারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, গত ১২ বছরে শত শত কালো দিবস তৈরি করেছে এ সরকার। এ সরকার গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না।

বিএফইউজে মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন বলেন, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা সুরক্ষা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার স্বার্থে এ সরকারকে বিদায় করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এ জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পেতে হলে বহুদলীয় ক্রিয়াশীল গণতন্ত্র থাকতে হবে।
ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ছিল সংবাদপত্র বিহীন একটি অন্ধকার দিন। সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার হরণের দিন। সরকারের মতের বিরুদ্ধে সামান্য মন্তব্যের কারণে তৎকালীন শেখ মুজিবের সরকার আবদুস সালাম, এনায়েতউল্লা খান, হাসান হাফিজুর রহমান, তোয়াব খানের মতো প্রথিতযশা সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত ও নির্যাতন করেছে। কবি ফররুখ আহমেদের মতো বরেণ্য কবি মারা যাবার পর তাকে কবর দেয়ার জায়গা দিতে রাজী হয়নি ওই ফ্যাসিস্ট সরকার।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবের সরকার আর বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সাথে সাড়ে তিন হাজার বছর আগের ফেরাউনের সরকারের মিল রয়েছে। ফেরাউন যেমন তার বিরুদ্ধাচরণ সহ্য করতে পারতো না। বর্তমান সরকারও পারে না। তিনি বলেন, বর্তমানে কোনো গণমাধ্যম নেই। আছে সরকারি প্রচার মাধ্যম। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসা বিনা ভোটের সরকার এখন ভিন্নভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সরকারকে বিদায় করা না গেলে মুক্তি মিলবে না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com