বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ অপরাহ্ন

স্থিতিশীল বঙ্গোপসাগর-ভারত মহাসাগর দেখতে চায় বাংলাদেশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে গত এক দশকে দেশের অগ্রযাত্রা লক্ষ্যনীয়। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের লক্ষ্যমাত্রা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে স্থিতিশীলতা চায় বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের বিবাদমান কোনও পক্ষে জড়াতে চায় না বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলে যদি অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সমস্যা হবে। সুতরাং আমরাও চাই, এই ভারত মহাসাগর ও বে অব বেঙ্গল এরিয়া যেন স্থিতিশীল থাকে। এর মাধ্যমে চলাচল থেকে শুরু করে সমুদ্রসম্পদ আহরণ সবকিছু আমরা সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে পারবো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে স্থিতিশীলতার দিকে কীভাবে যেতে পারি। এখন যদি আমরা কোনও বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যে জড়িয়ে যায় বা যাদের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যাহত হয়; তবে অবশ্যই লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধাপ্রাপ্ত হবো।’
অর্থনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আঞ্চলিক ও পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের মাত্রা ভিন্ন রকমের হবে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘হাতের পাঁচ আঙুল সমান হয় না এবং সে জন্য আমাদের কাছের দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যমূলক নীতি অবলম্বন করতে হবে। দূরের দেশগুলোর জন্য হয়তোবা সেটি আমরা নাও করতে পারি।’
বঙ্গবন্ধুর ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ নীতিকে মূলমন্ত্র হিসাবে ধরে নিলে ভারসাম্যমূলক নীতি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘অবশ্যইএকটা বিশেষ মুহূর্তে বা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কোনও একটি পক্ষ অবলম্বন করতে হতে পারে, বা কোনও বিতর্কের জন্ম হতে পারে; কিন্তু আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকবে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।’
ভারত
আমাদের এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারত এবং শক্তিশালীও বটে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের যে সম্পর্ক এবং গতি প্রকৃতি, সেটি যাতে কোনও মতেই বাধাগ্রস্ত না হয়। এটিকে কীভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে লক্ষ্য থাকবে। আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে এটা খেয়াল রাখতে হবে।’
যেকোনও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সমস্যা থাকে এবং ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে সব প্রতিবন্ধকতা থাকে সেগুলোকে আমাদের ম্যানেজ করতে হবে।’
আঞ্চলিক দেশ
এই অঞ্চলে ভারত ছাড়া আরও অন্যান্য ছোট ছোট দেশ আছে, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ কারণে আমাদের সম্পর্ক শুধু যে ভারতকেন্দ্রিক হবে সেটি নয়।’
আমাদের একটি প্রতিবেশী (মিয়ানমার) এখন কিছুটা ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে চাই।’
চীন
এরপর অবশ্যই আসে আরেক বড় প্রতিবেশী চীনের কথা। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকার কথা অবশ্যই চলে আসে; কিন্তু এখনকার বাস্তবতা হলো, চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সম্পর্ক অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। সুতরাং এটা যাতে কোনও মতে ব্যাহত না হয়।’
‘আমাদের অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্পে চীন সহায়তা করছে এবং সেগুলো সুসম্পন্ন হওয়া দরকার। তাছাড়া চীনের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন জিনিসের যোগান সুলভ মূল্যে পেয়ে থাকি এবং এই বিকল্প উৎস প্রয়োজন রয়েছে।’Íবলেন পররাষ্ট্র সচিব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এ সব বিষয় বিবেচনা করলে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে এবং তাদের যে সব উদ্যোগ রয়েছে যেমন: বি আর আই ইত্যাদি। এগুলোর সুযোগ নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই সংযুক্তির কোনও সুবিধা নিতে পারি কিনা সেটার জন্যই বিআরআইএ যোগ দিয়েছি।’
জাপান
জাপানকে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে সবাই জানে এবং ওই দেশটির সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার সময় থেকেই সম্পর্ক। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যদি কৌশলগত স্তরে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে লাভ ছাড়া কোনও ক্ষতি হবে না। তাদের যে বিগবিসহ অন্যান্য উদ্যোগগুলো রয়েছে, সেখানে সংযুক্তির একটা সুযোগ রয়ে গেছে এবং সেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো রয়েছে। রয়েছে নেপাল ও ভুটান। এর সুযোগ নিয়ে আমরা জাপানের সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক করতে চাই।’
যুক্তরাষ্ট্র
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন প্রশাসন পক্ষে না থাকলেও মার্কিন জনগণ সব সময় বাংলাদেশের সমর্থন দিয়েছে; সুতরাং এখানে সদিচ্ছার কোনও কমতি নেই।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কৌশলগত, মিলিটারি সম্পর্ক বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় একই।’
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মানবপাচার, মাদক চোরাচালান এবং অন্যান্য ইস্যুতে আমরা একসঙ্গে কাজ করি। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি অথবা আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা আছে। এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ইউএসএআইডি ভূমিকা রাখতো, কিন্তু এখন দেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় তেমন ভূমিকা রাখে না, কারণ আমাদের নিজেদের সক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সঠিক পথেই রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অনেক বড় ট্রেডিং পার্টনার এবং তৈরি পোশাক শিল্পের অন্যতম বড় মার্কেট।’
জিও স্ট্র্যাটেজি
যে সব ভূ-কৌশলগত উদ্যোগ বৃহৎ শক্তিগুলো নিচ্ছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকার পক্ষপাতি পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, ‘উদ্যোগগুলো একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে, কিন্তু এ ধরনের সংঘাতমূলক পরিস্থিতি থেকে সব সময় নিজেদের স্বার্থে দূরে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়।’
আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বিশ্বের দেশ হওয়া এবং এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন উচ্চ প্রবৃদ্ধি দরকার বলে জানান তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com