বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

স্ত্রী-শিশু কন্যাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সুজন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাজারি করছিলেন সুজন। আর বলছিলেন, ‘আমার সব শেষে হয়ে গেছে, আমার আর কেউ বেঁচে নেই। আমার আর বেঁচে থেকে কি হবে’। গত রোববার সন্ধ্যা রাতে মগবাজার ওয়্যারলেসগেটে বিস্ফোরণে স্ত্রী জান্নাত (২৩) ও নয় মাসের শিশুকন্যা সুবহানাকে হারিয়ে এভাবেই মাতম করছিলেন তিনি।
জানা গেছে, সুজন ঢাকার মগবাজারে রমনা ফার্মেসিতে কাজ করেন। স্ত্রী-শিশুকন্যাকে নিয়ে থাকতেন বড় মগবাজার এলাকায়। গত দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। কয়েক দিন আগে তাঁর শ্যালক রাব্বি বাসায় বেড়াতে আসে। গত রোববার বিকেলে স্ত্রী জান্নাত তাঁর ভাইকে নিয়ে মগবাজারে শরমা হাউসে খেতে যাওয়ার কথা বলেন। সন্ধ্যার পর জান্নাত তাঁর মেয়ে ও ভাইকে নিয়ে ওয়্যারলেসগেটের শরমা হাউসে যান। ওই মুহূর্তেই ঘটে বিস্ফোরণ। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু সুবহানার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জান্নাত। তার ভাই রাব্বি গুরুতর আহত অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিস্ফোরণের খবর শুনে সুজন প্রথমে মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে মেয়ে সুবহানার লাশ পান। এরপর মেয়ের লাশ হাসপাতালে রেখেই সুজন ঢাকা মেডিকেলে ছোটেন স্ত্রীর খোঁজে। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে স্ত্রী জান্নাতের লাশ পান। স্ত্রীর লাশ দেখেই মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন সুজন। আহাজারি আর বুকফাটা আর্তনাদ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জান্নাতকে রাত ৯টার দিকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তার পুরো শরীর ধুলাবালি ভরা, ক্ষত আর রক্তও দেখা যাচ্ছিল। আহতদের ভিড় আর হাসপাতালের কোলাহল ছাপিয়েও তার কণ্ঠের আর্তি শোনা যাচ্ছিল। ট্রলিতে শুয়ে অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত যাওয়ার সময় জান্নাত বারবার শুধু একটি কথাই বলেছিলেন: “আমাকে বাঁচান, স্বামীকে ডাকেন।” তবে তার স্বামী সুজন যতক্ষণে পৌঁছান ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে যান জান্নাত।
উল্লেখ্য, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো ওই তিনতলা ভবনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। তিনতলা ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো শুরু করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হয় অনেককে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের কারও কারও শরীর পুড়ে গেছে। তবে বেশিরভাগই আহত হয়েছেন বিস্ফোরণে ছিটকে যাওয়া কাচের আঘাতে। বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক। অন্তত ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com