সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১

আগামী ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল উল আজহা। লকডাউন শেষে খুব শিগগির হয়তো জমে উঠবে দেশের কোরবানীর পশুর সব হাট। কোরবানীর জন্য সবাই নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হৃষ্টপুষ্ট গরু বা ছাগল কিনতে চায়।
সঠিক খাদ্যভাস এবং নির্দিষ্ট পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক খামারি গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকেন। ১০ বছর আগেও এমন মোটাতাজা এবং ওজনধারী কোরবানীর পশু পাওয়া দুষ্কর ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খামারিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। তবে প্রতিবছরই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ উপায়ে বেশি লাভের স্টোরয়েড জাতীয় হরমোন সহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করে থাকে। এভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ গরুর মাংস খেলে শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালী ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আশার কথা হলো, কোরবানির পশুর হাটে বেশ কয়েকটি লক্ষণে চেনা যায় কোন পশুটিকে কৃত্রিম উপায়ে ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে মোটাতাজা করা হয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক, কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা কোরবানির পশু চেনার উপায়।
* আচরণ: স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হৃষ্টপুষ্ট গরুর আচরণ হবে সক্রিয়। দৃষ্টি থাকবে তীক্ষ্ম, যেকোনো পরিবেশে তারা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে। আর কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু পরিবেশ সম্পর্কে ততটা সজাগ থাকবে না। ক্লান্ত এবং নির্জীবের মতো মনে হতে পারে। গরু অস্বস্তিকর অবস্থা অনুভব করবে।
* মাংসের স্থিতিস্থাপকতা পর্যবেক্ষণ: কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর বেশি মাংসল অংশে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যাবে এবং দেবে যাওয়া অংশ আবার স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক উপায়ে বা স্বাভাবিকভাবে মোটা করা গবাদিপশুর ক্ষেত্রে দ্রুতই মাংস স্বাভাবিক হয়।
* অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি: কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর ফুসফুস কিছুটা দুর্বল হয়ে থাকে ফলে বেশিক্ষণ শ্বাস ধরে রাখতে পারে না। দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। একটু হাঁটলেই হাঁপায়, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো দুর্বল থাকে। খুবই ক্লান্ত দেখায়। শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের সময় যদি শব্দ হয়, তাহলে এ ধরনের গরু না কেনাই ভালো।
* গরুর রানের মাংসের পুরুত্ব: স্বাভাবিক উপায়ে মোটাতাজা গরুর পেছনের রানের মাংস শক্ত হয়। স্টেরয়েড হরমোন ইনজেকশন দেওয়া গরুর রানের মাংস নরম হয়। মাংসের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে পেশির কোষে অতিরিক্ত পানি জমার কারণে মাংস নরম হয়ে যায়। তাই গরুর পেছনের রানের মাংস পরীক্ষা করে কেনা ভালো।
* লালা বা ফেনা: আবহাওয়া খুব গরম না থাকলে যদি গরু মুখে লালা বা ফেনা বেশি থাকে তাহলে তা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা বলে ধারণা করা হয়। তবে সাময়িকভাবে খাবারের সমস্যার কারণেও অতিরিক্ত লালা বা ফেনা এবং পেট ফাঁপা দেখা যায়। যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন।
* হাটাচলা: কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকৃত গরুর শরীর ভারী হয়ে যায়। বেশি পানি জমার কারণে সহজে হাঁটতে চায় না এবং এক জায়গায় বসে থাকে। বসে থাকা গরুকে উঠিয়ে হাঁটিয়ে দেখা উত্তম।
* খাবারে অনাগ্রহ: সুস্থ ও স্বাভাবিক উপায়ে বেড়ে উঠা গরু খাবার দেখতেই জিহ্বা দিয়ে টেনে খাওয়ার চেষ্টা করবে। অন্য সমস্যা থাকলে খাবারে অনাগ্রহ দেখায়।
* মাজেল শুষ্ক থাকা: অসুস্থ গরুর মাজেল বা নাকের উপরের অংশ শুষ্ক থাকে। কিন্তু সুস্থ উপায়ে বেড়ে উঠা গরুর মাজেল বা নাকের উপরের অংশ ভেজা ভেজা থাকে।
* পা ও মুখ ফোলা: ইনজেকশন দিয়ে কিংবা ওষুধ খাইয়ে মোটা করা গরুর পা ও মুখ ফোলা থাকবে, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় এই গরু ঝিমাবে, সহজে নড়াচড়া করবে না।
* তাপমাত্রা: স্বাভাবিক পরিবেশের তাপমাত্রায় সুস্থ গরুর তাপমাত্রা সাধারণত ১০০-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ে থাকে। গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ। পরিবেশ এবং ভ্রমণ জনিত ধকলের কারণেও তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে বিক্রেতার কাছে গরু হাটে পৌঁচেছে কখন সে সময়টা জেনে নিতে হবে। দূর থেকে ভ্রমণ করে আসা গরুর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে সাধারণত ১-২ ঘণ্টা সময় লাগে। অন্যকিছু হলে তা সমস্যা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। নিজে সচেতন থেকে উপরোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কোরবানির পশু ক্রয় করলে নিরাপদ পশু পাবেন সহজেই। করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুতই কিনে ফেলুন আপনার পছন্দের কোরবানির পশুটি। লেখক: ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান , প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা,উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল,ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com