নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২৫ কোটি কেজি চা রফতানি করে ভারত। তবে মহামারীসহ নানা কারণে চলতি বছর রফতানি অন্তত চার কোটি কেজি কম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বাজারে চা রফতানি বাড়াতে বাণিজ্য চুক্তি করতে চান ভারতের ব্যবসায়ীরা। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। দেশটির গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আমদানি ও রফতানির পূর্বাভাস দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, চলতি বছর ভারতের চা রফতানি খাত বেশ বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়তে পারে। ২০২১ সালের প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী চায়ের রফতানি কমবে তিন-চার কোটি কেজি। মোট রফতানি ২০ কোটি কেজিতেও পৌঁছতে পারবে না। এমন অবস্থায় চা বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে চাইছে দেশটির সংশ্লিষ্টরা। এমন আগ্রহ বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের সঙ্গে পিটিএ বা প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্টের তাগিদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সূত্র বলছে, ভারতে বছরে ১৪০ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়। রফতানি হয় প্রায় ২৫ কোটি কেজি। তবে চলতি বছর কভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাব, প্রতিযোগী দেশে স্বল্প দামের চা উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা ও আমদানিকারক দেশগুলোতে আমদানি নিষেধাজ্ঞার মতো বিরূপ পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে ভারতের চা রফতানি ২০ কোটি কেজিতেও না পৌঁছানোর পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ চা উৎপাদনকারী দেশ হলেও রফতানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটাতে চা আমদানি করা হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পিটিএর মাধ্যমে চা রফতানি করে নিজেদের মন্দা মোকাবেলা করতে চাইছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে পিটিএর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় চা রফতানি বাড়ানো হলে দেশী চা বাগানগুলোর জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এইচআরসি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (টি ডিভিশন) মো. ইদ্রিস বণিক বার্তাকে বলেন, ভারতের চায়ের চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ বেশি। তাছাড়া ভৌগোলিক কারণে পূর্বাঞ্চলের চা ভারতের বিভিন্ন নিলামে নিয়ে বিপণন জটিলতায় বাংলাদেশে বিপণন অনেক বেশি সুবিধাজনক। যার কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বাংলাদেশের সঙ্গে চা রফতানিতে বিশেষ চুক্তি করতে চিঠি দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পিটিএ বা এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) সুবিধা পেলে বাংলাদেশের শুল্ক কাঠামোর চেয়েও কম শুল্কে চা আমদানির সুযোগ পাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো। আবার এ ধরনের চুক্তি হলে দেশের চা বাগানগুলোর উৎপাদন প্রবৃদ্ধি, গুণগত মান কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ফলে চুক্তির আগে বিষয়গুলো ভালোভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করে তিনি।
কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাতে ভারতের চা রফতানি ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। ভারতীয় চা বোর্ডের হিসাবে ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে চা রফতানির পরিমাণ ৪ দশমিক ৮৬ কোটি কেজি। ২০২০ সালে এ রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৮৫ কোটি কেজি। ২০১৯ সালে এ রফতানির পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৬২ কোটি কেজি। চা রফতানির নি¤œমুখী এ প্রবণতার কারণেই বাংলাদেশের বাজারকে আকর্ষণীয় মনে করছে ভারত। তাগিদ জানানো হচ্ছে বাণিজ্য চুক্তির। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সুজিত পত্র ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের সরকারের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে পিটিএ বন্দোবস্ত করা। অন্তত আসাম, ত্রিপুরা ও উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত দেড় থেকে দুই কোটি কেজি চা রফতানির জন্য এ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে কভিড প্রেক্ষাপটে রফতানি বাড়াতে পিটিএর তাগিদ জানালেও বাংলাদেশে চা রফতানিতে ভারতে আগ্রহ বেশ পুরনো। ২০১৯ সালের শেষার্ধেও এ আগ্রহ দেখিয়েছিল তারা। তখনো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে বাংলাদেশে চা রফতানির আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। বিশেষ করে ত্রিপুরা, আসামের শিলচর, করিমগঞ্জসহ ওই অঞ্চলে অনেক চা বাগান আছে। ওইসব বাগানের চা রফতানির জন্য আখাউড়া স্থলবন্দর খুলে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে।