শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন

নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস মহররম

ইসলাম ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১

মহররম শব্দের অর্থ, সম্মানিত বা নিষিদ্ধ। আরবি পঞ্জিকার প্রথম মাস এটি। এই মাসকে আরবি ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে সেরা মাস হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। এ মাস আমাদের জন্য যেরকম সুসংবাদের তেমনি শোকেরও। এ মাসে পৃথিবীতে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তার নিজের কুদরতি প্রকাশ করেছেন। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা বনি-ইসরাইলদের জন্য নদীকে রাস্তা বানিয়ে পার করে দিয়েছেন আবার এদিকে ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীকে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন। এই মাসে হুসাইন রা:-এর শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। এই মাস আল্লাহ তায়ালা কাছেও অনেক মর্যাদাপূর্ণ, তাই আল্লাহর রাসূল সা:-এর কাছেও অধিক সম্মানের। আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি যেদিন থেকে তিনি আকাশ ও নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এই মাসগুলোর (সম্মান নষ্ট করে) নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সূরা তাওবা-৩৬) তাফসিরের কিতাবে বলা হয়েছেÑ এই সম্মানিত চার মাস হলোÑ মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ।’ (তাফসিরে বাগাবি -৪/৪৪)
আবুজর রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সা:কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাতের কোন অংশ উত্তম? এবং কোন মাস উত্তম? তিনি বলেন, ‘রাতের মধ্যে উত্তম হলো গভীর রাত। মাসগুলোর মধ্যে উত্তম হলো আল্লাহর মাস। যেটাকে তোমরা মহররম বলে থাকো।’ (নাসায়ি-৪৬১২) এই আয়াত ও হাদিস থেকে এ মহররম মাসের ফজিলত সুস্পষ্ট হয়। তাই আমাদের প্রত্যেককে আমল করার মাধ্যমে এ মাসের সম্মান হিফাজত করতে হবে, বিনষ্ট করা যাবে না। যেই মাস আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কাছে প্রিয় ও সম্মানের হয়, একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কাছেও এ মাস সম্মানের হওয়া জরুরি। এখন এ মাসকে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে সম্মানিত করেছেন তা জানতে হবে এবং আমাদেরকে এ মাস সম্মান করতে হলে কী কী করতে হবে ও বর্জন করতে হবে তাও জানতে হবে। এ নিয়ে কিছু আলোকপাত করব। যেহেতু এ মাস রমজান মাসের মতো অনেক ফজিলতের তাই আমাদের এ মাসকে সম্মান করতে হলে বেশি বেশি নফল রোজা, নামাজ, জিকির-আসকার ও ইস্তিগফার করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররমের রোজা আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হচ্ছে গভীর রাতের নামাজ।’ (মুসলিম-২৬৪৫)
এ মাসে সওয়াব অর্জনের আরেকটি সুবর্ণময় সুযোগ রয়েছে আশুরার রোজার মাধ্যমে। এ মাসের একটি দিনকে আশুরার দিন বলা হয়। এ দিনটি বিভিন্ন দিক থেকেও ফজিলতের। এই দিনে রোজা রাখলে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের সওয়াব দিয়ে থাকেন, সুবহান আল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যে, আশুরার রোজায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম) তবে এই মাসকে কেন্দ্র করে বা এ মাসের বিশেষ দিন আশুরাকে সামনে রেখে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা কুসংস্কার পালন করা যাবে না। আতশবাজি, তাজিয়া মিছিল বের করা, নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরানোর মতো জঘন্য ও পরিহারযোগ্য কোনো কাজ করা যাবে না। সুতরাং, একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে উচিত হলোÑ এই ফজিলতপূর্ণ মাস মহররমকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে নিজের গুনাহ মাফ ও আমলের ভা-ার সমৃদ্ধি করায় ব্যতিব্যস্ত থাকা। সব ধরনের খারাপ কাজ, কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বোঝার ও সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুক, আমিন। মোহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সাভার, ঢাকা ও পরিচালক, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com