সিরাজগঞ্জে কয়েকদিন ধরে টানা পানি বাড়ায় প্লাবিত হয়েছে নি¤œাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে স্থিতিশীল রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) আব্দুল লতিফ জানান, ওই পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলনবিলসহ জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ, রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও গোচারণ ভূমি। গোচারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার গো-খামারিরা। সড়ক ও বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যাকবলিতরা।
সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মাস্টার বলেন, যমুনার পানি বাড়ায় অসময়ে চরাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অনেক ফসল তলিয়ে গেছে। কাজিপুরের নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, ডিক্রিদোরতা গ্রাম ও জিআরডিপির ৬নং নৌকাঘাট পয়েন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে ভাঙন আতঙ্কে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি ও নতুন স্থাপন করা বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে যেকোনো সময় আবার বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
ফরিদপুরে পানিবন্দি দেড় শতাধিক গ্রাম, সুপেয় পানির সংকট: ফরিদপুরে এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। জেলা সদর, চরভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার ফসলি ক্ষেত, রাস্তা ও নিচু এলাকার বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় শতাধিক গ্রামের মানুষ। সেই সঙ্গে সুপেয় পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, পদ্মায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান জানান, এই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরে যাওয়ার তিনটি রাস্তা তলিয়ে গেছে। কয়েক হাজার একর আউশ ধানক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত।
তিনি আরও জানান, পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়নের শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী গ্রামের ১৬ একর ও আলিমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের তিন একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আলিমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে ভাঙনের কবলে পড়ে অন্তত দেড় হাজার কলা গাছ ভেসে গেছে। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের মধ্যে এক হাজার ১৫০ পরিবার, ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের এক হাজার ২০০ পরিবার ও চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের তিন হাজার পরিবারসহ মোট ৪১টি গ্রামের পাঁচ হাজার ৩৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, নাজিম বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামে যাওয়ার ইটের রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এবং বেপারী ডাঙ্গীগামী সড়কের মোতালেব মিন্টুর বাড়ির সামনে ৫০ মিটার অংশ পানির তোড়ে ভেসে গেছে।
চর মাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, এই ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে আছে অন্তত তিন হাজার পরিবার। পানিতে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন জানান, উপজেলার গাজিরটেক, হরিরামপুর, চরঝাউকান্দা ও চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের একাংশ প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নগুলোতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। তিনি আরও জানান, চরভদ্রাসনের ইউনিয়নগুলো চরাঞ্চলবেষ্টিত নি¤œাহঞ্চল, তাই একটু পানি বৃদ্ধি পেলেই এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে যায়। এসব এলাকায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গবাদি পশুরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সদরপুর উপজেলার দিয়ারা নারকেল বাড়িয়া, চরনাছিরপুর, ঢেউখালী ও চরমানাইর ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি। এছাড়া ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগিরই ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলার নি¤œাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের খবর রাখছি। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। জেলার সকল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ সরকারি খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে।
খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ৩ রোহিঙ্গা শিশুর: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে খেলতে গিয়ে লেকের পানিতে ডুবে তিন রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে ভাসানচরের আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩ এর চেয়ারম্যান দীঘি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃত শিশুরা হলো- ৫৪ নম্বর ক্লাস্টারের বি ৯-১০ নম্বর কক্ষের দলিলুর রহমানের ছেলে মো. আনিসুর রহমান আনাস (৬), মো. জামাল হোসেন (৯) ও একই ক্লাস্টারের বি ১১-১২ নম্বর কক্ষের আবদুর সবুরের ছেলে মো. হাফসা (৫)। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ৫৪ নম্বর ক্লাস্টারের দলিলুর রহমানের দুই ছেলে আনাস ও জামাল এবং আবদুর সবুরের দুই ছেলে হাফসা ও জুনায়েদ একসঙ্গে খেলতে বাইরে যায়। পরে বেলা ১১টার দিকে আনাস, জামাল ও হাফসা চেয়ারম্যান দীঘির লেকের পানিতে পড়ে গেলে জুনায়েদ (৬) দৌড়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী ক্লাস্টারের রোহিঙ্গাদের জানায়। ওসি আরও জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পানিতে পড়া তিন শিশুকে লেক থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।