দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই বলেই আজ সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করতেই রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রুহুল আমিন গাজীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ সরকারের আমলে সাগর-রুনিসহ ৪২ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না। আজ যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে শুধু সাংবাদিক নয় গণতন্ত্রকামী সকল মানুষকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। গত সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন।
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ডিইউজের সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোদাব্বের হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, বিএফইউজের সাবেক দফতর সম্পাদক আবু ইউসুফ, ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার ফরিদ আহমদ, সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সহ-সভাপতি শাহীন হাসনাত, বাছির জামাল, রাশেদুল হক, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাহফিজুল ইসলাম রিপন, ডিইউজের কোষাধ্যক্ষ গাজী আনোয়ারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, প্রচার সম্পাদক খন্দকার আলমগীর হোসাইন, দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, সাব-এডিটর কাউন্সিলের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক নাবিল রহমান, সাংবাদিক নেতা আব্দুর রহমান খান, জেসমিন জুঁই, সাখাওয়াত হোসেন মুকুল, আবু হানিফ প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ঐতিহাসিক সত্যের প্রমাণ লাগে না। আপনারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিনা? আপনার পরিবার মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিনা সেটাই এখন প্রমাণ সাপেক্ষ ব্যাপার। সত্যিকার অর্থে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন নাকি বৃহত্তর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন সেটাই এখন প্রধান টপিক। তিনি বলেন, যারা সত্যিকার অর্থে মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে অপমান করা হচ্ছে। আর তারা (আওয়ামী লীগ) দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চালাচ্ছে।
রিজভী বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতি আড়াল করতেই সরকার একের পর এক ইস্যু তৈরি করে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ করারও পাঁয়তারা করা হচ্ছে। যেনো কেউ তাদের লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে সেজন্যই এমন করছে। তিনি বলেন, দেশে শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুন ও লুটপাটের রাজত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে দেশ মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, রুহুল আমিন গাজী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনি কারাগারে কেন? তার উপর কেন নির্যাতন করা হচ্ছে? বর্তমানে সত্য প্রকাশ করলেই সাংবাদিকরা হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহার করুন।
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, আজ আন্তর্জাতিক গুম দিবস। বাংলাদেশে এতো গুম হচ্ছে অথচ সরকার কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না। কারণ এই গুমের প্রধান হোতাই তো এই সরকার। প্রতিটি গৃহে আজ আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন, কাকে তুলে নিয়ে যাবে সেই শঙ্কা এখন ঘরে ঘরে। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদ তারা শুনতে পায় না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, করোনা মোকাবেলায় এ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। টিকায় ব্যর্থতার কারণে এতোগুলো লোক মারা গেল। তিনি বলেন, এরা মানুষের জান বাঁচাতে পারবে না, জীবন বাঁচাতে পারবে না। এরা কেবল মানুষকে জেলে দিতে পারবে, নির্যাতন করতে পারবে, নির্বিচারে গুম-খুন করতে পারে।
তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে সবাইকে এই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মাঠে নামতে হবে। যে যেরকম করে পারেন, লড়াইটা ছাড়বেন না। সবাই রুখে দাঁড়ান। খুব যে বেশি দিন লাগবে ব্যাপারটা এমন না। পতনের আগে যে রকম কাঁপতে থাকে এই সরকার তেমনি কাঁপছে। ওদের একেক জায়গার দুর্বলতা মানুষের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে। পায়ের নিচ থেকে মাটি তাদের চলে যাচ্ছে।
মান্না বলেন, রুহুল আমিন গাজীকে যারা কোনো রকম সত্য কারণ ছাড়াই মিথ্যা অভিযোগে এতদিন ধরে গ্রেফতার করে রাখতে পারে তাদেরও একদিন পতন হবে। আসিফ নজরুল একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে কারো নাম বলেনি। ওদের গায়ে লাগলো কেন? কারণ ওদের অনেক লোক ফাস্ট হোম, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম করে রেখেছে বাইরে। টাকা-পয়সা জমিয়েছে। তাদেরও ওই অবস্থা হবে।
এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে এমন মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান সরকার মিথ্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। ওরা নির্লজ্জ। এমন দিন আসবে আওয়ামী লীগ পালানোর পথও খুঁজে পাবে না। এসময় তিনি রুহুল আমিন গাজীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের কাজ হলো সত্য প্রকাশ করা। যা আজ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাশীলরা সত্য সহ্য করতে পারে না। রুহুল আমিন গাজীর কোনো অপরাধ নেই। শুধুমাত্র সত্য প্রকাশ ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলার জন্য আজ কারাগারে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) যদি বাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তাহলে অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজীকে মুক্তি দিন। আর যদি মুক্তি না দেন তাহলে বুঝবো আপনারা বাক-স্বাধীনতা ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। এসময় তিনি সবাই গণতন্ত্র রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও থাকে না। আমাদের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার কথা উল্লেখ থাকলেও সরকার সেটা মানছে না বরং গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যেখানে সত্য প্রকাশে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আজ সাংবাদিকের কলম স্বাধীন নয়, সেটি কাজ করছে উপর মহলের নির্দেশে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে গণতন্ত্র অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে সাংবাদিকদের এনেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। ৭২-৭৫ সালে ৪টি সংবাদপত্র রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। পরেরবার এসে দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমসসহ অনেক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। কাজেই মুক্ত সাংবাদিকতা চাইলে মিডিয়ার জাতশত্রুদের সরাতে হবে।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার আদায় আন্দোলনের আপোষহীন নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন গাজীকে অন্যায়ভাবে ১০ মাস যাবৎ জেলখানায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর। সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করতে না পেরে তাকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক করে এখন নানা অজুহাতে জামিন প্রলম্বিত করছে। বর্তমান সরকার স্বাধীনতার চেতনাকে পায়ের নীচে পিষ্ট করছে। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে আপোষহীন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীকে মুক্ত করে এর জবাব দেয়া হবে।
মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের কাজ হলো দেশের স্বার্থে জনগণের সাথে লেখালেখি করা। আমাদের অফিসে থাকার কথা ছিল। কিন্তু পেশার ওপর আঘাত আসায় আমরা আজ রাজপথে আন্দোলন করছি। মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাংবাদিকদের প্রিয় নেতা রুহুল আমিন গাজীকে ১০ মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। রুহুল আমিন গাজী মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।