ভরা মৌসুমেও মিরসরাইয়ে রূপালী ইলিশের বড় আকাল চলছে। জেলেরা জীবন বাজি রেখে ইলিশের প্রধান উৎস্য বঙ্গোপসাগরের গভীরে গিয়ে পর্যাপ্ত ইলিশ পাচ্ছে না। আর কখনো কখনো অল্প কয়েকটি ইলিশ ধরা পড়লেও এক সাথে সাগরে যাওয়া একদল জেলেরা ভাগে পাচ্ছে সামান্য কয়েকটি মাছ। দিন শেষে নিরাশ হয়ে খালি হাতে ফিরছে তারা। ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে জেলেরা। জেলেরা জানান, সাগরে যাওয়া আসার তেল খরচের টাকাই উঠছে না। জানা যায়, গত বছরও এসময় ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন মীরসরাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষে জালভরা ইলিশ মাছ পাওয়া গেছে কিন্তু এ
বছর সাগর থেকে অনেকটা খালি হাতে ফিরছে জেলেরা। সাহেরখালী ইউনিয়নের জলদাস পাড়ার জেলে হরিলাল দাস জানায়, মুহুরি প্রজেক্টের স্লুইচগেট খুলে দেয়ায় স্রোত বেড়ে গেছে। সবগুলো মাছ দক্ষিণদিকে চলে গেছে। এখন ইলিশ ধরার মৌসুম। এ সময় স্লুইচগেটের ৪০টি দরজা না খুলে দিত তাহলে আমরা মাছ ধরতে পারতাম। গেলো বছর প্রচুর মাছ পাওয়া গেছে কিন্তু এ বছর তার ছিটেফোটাও পাচ্ছি না। অন্যান্য জেলেরা জানায়, সাধারণত জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস জেলেদের কাঙ্খিত সময়। বর্ষার এই তিন মাসের দিকে তাকিয়ে জেলেরা সারাবছর প্রহর গুনে। প্রতিবছর এ সময় সমুদ্রে প্রচুর ইলিশের দেখা মেলে। আর এই ইলিশ বিক্রির অর্থ দিয়েই চলে জেলেদের সারাবছরের সংসার। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিরসরাই উপকূলে ভরা মৌসুমেও ইলিশ নদীতে ইলিশের দেখা নেই। সারা দিন জাল পেতেও মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। আর দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে। উপজেলার বড়দারোগারহাট,
বড়তাকিয়া, হাদি ফকির হাট, মীরসরাই সদর, আবুতোরাব, মিঠাছড়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে ইলিশের আকাল। বড়দারোগাহাট ও মিঠাছড়া বাজারে ইলিশ দেখা গেলেও তা আকারে ছোট এবং মাঝারী। তাও এসব চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাট থেকে আসছে। ভরা মৌসুমেও এ হাহাকার বিপদে ফেলেছে জেলেদের। ঋণ করে ইলিশ শিকার ও ব্যবসায় যারা নেমেছেন, তাদের দিন দিন সুদ বাড়ছে। বাকিতে রসদ কিনে সময়মতো শোধ করতে না পেরে দেনায় ডুবছেন জেলেরা। আবু তোরাব বাজারের প্রবীণ মাছ বিক্রেতা প্রিয় লাল জলদাশ বলেন, ইলিশের কথা উঠলে বড় দুঃখ লাগে। এই মৌসুমে আমরা শুধু ইলিশ বিক্রি করেই চলতাম। মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর আগেও এই সময় সাগর পাড়ে ইলিশের ছড়াছড়ি ছিল। মীরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইলিশ প্রজনন কেন্দ্রের মধ্যে উপজেলার সাহেরখালি ও ডোমখালী পয়েন্ট অন্যতম। প্রাথমিকভাবে আন্দাজ করছি ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল জোনের প্রভাবে এই বিচরণ এলাকা থেকে তারা সরে গেছে।