মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

জেগে ওঠা চরে গাছের নাম থেকেই নামকরণ

মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস গৌরনদী (বরিশাল) :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে ছৈলারচর

নদীর তীরে ৪১ একরের অধিক জমি নিয়ে জেগে ওঠা বিশাল চরে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মেছে প্রায় লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর এ গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা চরের নামকরণ করা হয়েছে ছৈলারচর। প্রকৃতির নৈসর্গে সাজানো নয়নাভিরাম ছৈলারচর দিন দিন পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। তাই লকডাউন শিথীলের পর থেকে প্রতিদিনই দেশের দূর-দূরান্তের পর্যটকদের ছৈলারচরে ভীড় বেড়ে চলেছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সম্প্রতি ছৈলারচরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সেতু ও গোলঘর গত ১১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ছৈলারচরে প্রবেশের আগে নির্মান করা হয়েছে ডিসি ইকোপার্ক। যা ইতোমধ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর দিনভর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মতো লাখো ছৈলা গাছে বিভিন্ন পাখি নীড় বেঁধেছে। পুরো চরজুড়ে বিচিত্র রকমের পাখির কলকাকলি পর্যটকদের মনছুঁয়ে যায়। ছৈলা গাছ ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতের গাছকে ঘিরে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচর। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছৈলার চরের বৃহত এলাকা এখন তলিয়ে রয়েছে। পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ছৈলারচরে নির্মান করা হয়েছে সু-বিশাল সেতু, একাধিক গোল ঘর, ওয়াশ রুম, বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকূপ, শিশুদের জন্য খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি। শেষপর্যায়ে রয়েছে রেষ্ট হাউজ নির্মানের কাজ।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মোছাদ্দেক হাওলাদার বলেন, বিশখালী নদীর বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছৈলারচরে বিগত সাত বছর ধরে প্রকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গাছপালা। যা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকে এ স্থানটি। দূরদূরান্ত থেকে এখানে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি পিকনিকের দল আসে। সরকারের সঠিক পৃষ্টপোষকতা পেলে দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে ছৈলারচর হতে পারে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির বলেন, ছৈলারচর পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি। পর্যটনকে বিকশিত করার পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। তাই এখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ছৈলারচর হতে পারে একটি আধুনিক ও আর্ন্তজাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র। ছৈলারচরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে দিন-রাত কাজ করা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুফল চন্দ্র গোলদার খবরপত্র কে বলেন, ২০১৪ সালে ছৈলারচরকে পর্যটন স্পট হিসেবে চি?হ্নিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ট্যুরিজম বোর্ড ছৈলারচর উন্নয়নের জন্য কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। যা বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন করা হলে ছৈলার চরটি হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলে মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র।
ডিসি ইকোপার্ক ॥ ছৈলারচরের প্রবেশের আগেই প্রায় পাঁচ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ডিসি ইকোপার্ক। কাঠালিয়ায় এই প্রথম একটি আধুনিক পার্ক নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক একর জমিতে খনন করা হয়েছে ডিসি লেক আর লেকের ওপর নির্মান করা হয়েছে সু-বিশাল সেতু ও গোলঘর। এছাড়া এখানে দেশি ও বিদেশী পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য নির্মান করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কটেজ। লেকজুড়ে তৈরি করা হবে সেতু, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকবে আধুনিক জলযান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে থাকবে মিনি চিড়িয়াখানা আর ছোটদের জন্য কিডস জোন। অতিসম্প্রতি ছৈলারচরে স্ব-পরিবারে ঘুরতে আসা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামাল হোসেন ও তার সহধর্মীনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৪ গুলশান আরা বেগম বলেন, এখানে বেড়াতে এসে দীর্ঘদিন পর প্রকৃতির সাধ পেলাম। এতো মনোরম পরিবেশে পর্যটনের জন্য এর চেয়ে আর ভাল স্থান হয়না। এটা পর্যটন আয়ের উৎস হতে পারে বলে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে প্রচুর বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতে পারে। পর্যটক ইসরাত জাহান মিম বলেন, পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য যেতে হয় জেলা শহরের বাহিরে। ছৈলারচরের পাশাপাশি ডিসি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা পেলে পাল্টে যাবে এখানকার চিত্র। পার্কটি চালু হলে বৃদ্ধি পাবে রাজস্ব আয়। বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাইফুল হাসান বাদল বলেন, অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ছৈলারচর। পর্যটন ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা হবে। প্রকৃতিতে সাজানো ছৈলারচরের পরিচিতি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় ছৈলারচরকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে এখানে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ট্যুরিজম বোর্ড থেকে ছৈলারচর উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব করা কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর বাস্তবায়িত হলে ছৈলার চরটি দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com