সরকার চাইলে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে সেই আলোচনা হতে হবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক এজেন্ডাতেই। ফখরুল বলেন, গত নির্বাচনের আগে যে আলোচনা হয়েছে আর এখন যে আলোচনা হবে- তা এক নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার এই একটি এজেন্ডা থাকলে আলোচনা করতে রাজি আছি। আমরা একটা জিনিসই চাই- তা হলো নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার। এটা তো কোনো অন্যায় দাবি নয়। সরকার আলোচনা করতে চাইলে বিএনপি সাড়া দেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এসব বক্তব্য দেন। গত মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল। জাতিসংঘ সফর শেষে গত সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের নাম নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যে কোনো নামই হতে পারে। তবে নির্বাচনকালীন সময় যে সরকার থাকবে- তা কোনো দলীয় সরকার হবে না। সরকারকে কোনো রূপরেখা দেওয়ার ব্যাপারে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সার্চ কমিটি সম্পূর্ণভাবে সরকার তাদের নিজেদের পছন্দের লোকদের দিয়ে তৈরি করে। যে কারণে হুদা কমিশন সরকারের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে দলীয় ভূমিকা পালন করেছে। যেটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনপিকে কেন ভোট দেবে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের হাত থেকে বাঁচার জন্য জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে। তারা দেশের যে অবস্থা তৈরি করেছেন, তাতে মানুষের জীবনে কোনো নিরাপত্তা নেই। জীবিকারও কোনো নিরাপত্তা নেই। চারদিকে ভয় ও ত্রাস, সন্ত্রাস ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই। মানুষ অতিষ্ঠ। ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়াবেন বলে তারা ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন ৭০ টাকা কেজি চাল। তারা বিনা পয়সায় সার দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- তা দেননি। মানুষ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বিএনপিকে ভোট দেবে। মানুষ শেখ হাসিনার সরকার থেকে মুক্তি চায়। বিএনপিই একমাত্র দল যারা অতীতে দেশের মানুষকে শান্তিতে রেখেছিল। এজন্যই জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।
নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো নির্বাচন কমিশন হোক, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয় না। এটা আমার মুখের কথা নয়। এটা আগেও অনেকে বলেছেন। নির্বাচন কমিশন খুব ভালো করলেন, সরকার তাদেরকে কাজ করতে দেয়নি তখন নির্বাচন তো সুষ্ঠু হবে না। আগামীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না- এমন হুশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এসব খেলা আর জনগণ গ্রহণ করবে না। শুনতে পাচ্ছি আগামীতে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। ইভিএম দিয়ে কারচুপি করবে। সরকার সত্যিকার অর্থেই যদি অর্থবহ নির্বাচন করতে চায় তাদের দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা। আলোচনা করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটা নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গঠন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন হবে সম্পূর্ণভাবে প্রহসন।
ক্ষমতাসীন দলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সমস্যা কোথায়? এত উন্নয়নই যদি করে থাকেন তাহলে আত্মবিশ্বাস থাকবে যে আপনারা জিতবেন। তাহলে কেন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে সমস্যা নিরসন করছেন না।
এক প্রশ্নে জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধানের বাইরে যাবে না বললেও তো ভুল বলছে তারা। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, আমরা সেখানে সংযোজন করেছি। তারাই হাইকোর্টে রায়ের দোহাই দিয়ে সেই রায়টারও সম্পূর্ণভাবে ভুল ব্যাখ্যা দেয়। সেই রায়েও কিন্তু আছে আরও দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সেটাও কিন্তু তারা করেনি। শুধুমাত্র তাদেরই সুবিধার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেছে। সংবিধান কি বাইবেল, যে পরিবর্তন করা যাবে না। জনগণের প্রয়োজনে সেই সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্দোলন তো হবেই। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হচ্ছেন বর্তমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে বেআইনিভাবে আটক রেখেছে। এত বেশি ভয় পায় যে, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পর্যন্ত দিতে চান না। তিনি (খালেদা জিয়া) বেরুলেই যে জনগণের উত্তাল তরঙ্গ তৈরি হবে- সেটা উনি (প্রধানমন্ত্রী) করতে চান না। এটা পরিষ্কার যে, এই দেশে তারা রাজনীতি করতে দেবেন না। রাজনৈতিক চর্চা থাকবে না। গণতন্ত্র থাকবে না। একটামাত্র দল থাকবে, একজন নেতা থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নেতা খালেদা জিয়া। নির্বাচন করতে না পারলে নেতা থাকবেন না, সেটা তো কোনো কথা নয়।