রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে পূনর্বাসিত করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। এতে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে মাঝিপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর মাঝে। গত শনিবার (২৩ অক্টোবর) সরেজমিনে উপজেলার রামনাথপুরম ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো টিন ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মেরামত ও বিলিন হওয়া ঘরগুলো সরকারিভাবে নতুন টিনে পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে। এসব নির্মাণ কাজ শনিবার পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, এমপি। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে দুপুরে সেখানকার বটেরহাট আরডিএস দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সেখানে বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি নানা সংগঠনের সহযোগিতা ও ভালবাসায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন স্বাভাবিক। তাদের চুলায় এখন রান্না হচ্ছে এবং কাজ-কর্মেও যোগ দিয়েছেন তারা।’ এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৬৬ পরিবারের মাঝে প্রায় ৬৫ লাখ টাকাসহ খাদ্য ও বস্ত্র সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ১৪টি ঘর নির্মাণ এবং ৪০টি ঘর মেরামত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে ১৬৬টি শাড়ি, ২৬৬টি লুঙ্গি, ১৬৬টি কম্বল, ৪০০ শুকনা খাবার প্যাকেট, ২৫ প্যাকেট গোখাাদ্য, ৪০ প্যাকেট শিশু খাদ্য, ১০০ বান্ডিল টিন এবং নগদ ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’ এছাড়াও জীবিকা নির্বাহের জন্য ১৫ জন জেলেকে মাছ ধরার জাল প্রদান করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৪০ সেট নতুন বই এবং ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ১৬টি সার্টিফাইট কপি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে বেসরকারি সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, আরডিআরএস এর পক্ষ থেকে মোট ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং দুটি মন্দিরের মধ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), রংপুরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে এবং ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
ঘটনার পর থেকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্চ) আসনের সংসদ সদস্য শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তানজিমুল ইসলাম শামীমসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
বেগমগঞ্জের সহিংসতার ঘটনায় ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ১২২ : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে গত ১৫ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখে ৮ জন ও তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ৫ জনসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে ঘটনায় ১০ মামলায় এ পর্যন্ত ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার ( ২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। গ্রেপ্তাররা হলেনÍ সুবর্ণচর উপজেলার চরবহুলা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. ফরহাদ (২৬), চৌমুহনী পৌরসভার সাহাব উদ্দিনের ছেলে শামীম (২৭), জয়নাল আবেদিনের ছেলে রিপন (১৮), বাবুলের ছেলে দুলাল (৪০), ছয়ানীর ইউনিয়নের দেলোয়ারের ছেলে জুয়েল (১৯), কামরুল হাসানের ছেলে আরাফাত হোসেন আবীর (১৮), হাজীপুরের নুরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে রাজীব (২৪) ও তাজুল ইসলামের ছেলে কামাল (৪৫)। এদের সবাইকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেনÍ বেগমগঞ্জের নরোত্তমপুরের আবদুস স্ত্তারের ছেলে শহীদ (৪৫), গণিপুরের এতিম আলীর ছেলে হুমায়ন (৬৩), আবুল কাশেমের ছেলে কাশেম বিন আবু জুবায়ের অরিন (২৫), মোস্তফার ছেলে ইমাম হোসেন রাজু (২৮) ও বাবুল মিয়ার ছেলে আলা উদ্দিন (৩৫)। জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ওই দিনের হামলাটি পূর্ব পরিকল্পিত। হামলাকারীদের এক পক্ষ বাজারের প্রধান সড়কে থাকা পুলিশকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, আর ৭টি গ্রুপ একযোগে ৭টি মন্দিরে হামলা চালিয়েছে বলে আমরা বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হয়েছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে সহিংসতাকারিদের চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বেগমগঞ্জে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলায় ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।