শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো কখনই ব্যাংক নয়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১

ব্র্যাক ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’, ‘নগদ’সহ বর্তমানে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা এমএফএস কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। জুন শেষে প্রায় ১০ কোটি এমএফএস হিসাবধারীর স্থিতির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ স্থিতির প্রায় ৮৫ শতাংশই বৃহৎ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি। তবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এত পরিমাণ অর্থ জমা থাকা মোটেই ঠিক নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো কখনই ব্যাংক নয়। এসব প্রতিষ্ঠান কেবল গ্রাহকের অর্থ স্থানান্তর ও পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। এত পরিমাণ অর্থ এমএফএস হিসাবে জমা থাকাটি আর্থিক রীতিনীতির বিরোধী।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যাংকে থাকা অদাবীকৃত আমানত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে অব্যবহূত হিসাবে জমা থাকা অর্থের কী হবে, সেটি সুস্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব হবে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিওর দিকে নজর দেয়া। দীর্ঘদিন ক্যাশ আউট হচ্ছে না, এমন হিসাবগুলো চিহ্নিত করে গ্রাহকদের অর্থ উত্তোলনের তাগিদ দিতে হবে। এতেও কাজ না হলে অব্যবহূত হিসাবে জমাকৃত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেয়া দরকার। এমএফএস প্রতিষ্ঠানে বিপুল অংকের অর্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে মুদ্রানীতির লক্ষ্য বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হবে।
তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘নগদ’ এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ণ অনুমোদন পায়নি। চলতি বছরের জুন শেষে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৭ লাখ। তবে বিপুল অংকের এ গ্রাহকের অর্ধেক হিসাবও সক্রিয় নেই। জুন শেষে সক্রিয় এমএফএস হিসাবধারীর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৯ লাখ। সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় উভয় শ্রেণীর গ্রাহকেরই ব্যাংক হিসাবে ই-মানির স্থিতি রয়েছে। জুন শেষে প্রায় ১০ কোটি এমএফএস হিসাবধারীর স্থিতির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ স্থিতির প্রায় ৮৫ শতাংশই বৃহৎ এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি।
বিকাশের হাতে থাকা গ্রাহকদের সব অর্থই নিরাপদ বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর। তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী আমাদের কাছে থাকা গ্রাহকদের অর্থের ২৫ শতাংশ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করার কথা। আমরা সরকারি নির্দেশনার চেয়েও অনেক বেশি অর্থ ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে বিকাশের হাতে থাকা অর্থের ৩৫ শতাংশ ট্রেজারি বিল-বন্ড কেনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাকি অর্থ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসাবে জমা আছে। আমাদের কাছে থাকা গ্রাহকদের সব অর্থই নিরাপদ। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করছে কিনা, সেটি দেখা দরকার।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা এমএফএস সেবার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সহজে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবে। তবে এক দশকের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে, এতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ অব্যবহূত থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে এমএফএস হিসাবগুলোয় যে পরিমাণ অর্থ জমা থেকে যাচ্ছে, তা দেশের মাঝারি মানের একটি ব্যাংকের সমান। চলতি বছরের জুন শেষে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে থাকা ই-মানির স্থিতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। বর্তমানে তা ১০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। যেখানে গত বছরের আগস্টেও এর পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
এমএফএস হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অব্যবহূত অর্থ বা জমার পরিমাণ বাড়ায় প্রতিনিয়ত ই-মানির স্থিতি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ই-মানির এ দ্রুত প্রবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোয় জমা থেকে যাওয়া অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এমএফএস সেবাদাতা বড় কোনো প্রতিষ্ঠান বিপর্যস্ত হলে দেশের বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শঙ্কা রয়েছে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ারও।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আর্থিক সেবা রকেটের মাধ্যমে ২০১১ সালে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা। গ্রাহকদের হাতে থাকা মোবাইলই অর্থ লেনদেনের মাধ্যম হয়ে ওঠায় দ্রুততম সময়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেবাটি। এক পর্যায়ে ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও সেবাটির বাজার দখলে তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছে অল্প কয়েকটি।
এমএফএস সেবা পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়েছিল দুই ডজনেরও বেশি ব্যাংক। অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায়িক ব্যর্থতায় সেবাটি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে ১৪টি প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিলেও বাজারের ৯৮ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউটের পাশাপাশি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির লেনদেনে সীমাবদ্ধ ছিল এমএফএসের কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি পরিশোধ, বেতন পরিশোধ, ইউটিলিটি বিল, মার্চেন্ট পেমেন্ট, রেমিট্যান্স আহরণের মতো বিষয়গুলোও এমএফএস সেবায় যুক্ত হয়।
দ্রুততম সময়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বর্তমানে প্রতিদিন ২ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। চলতি বছরের জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মোট লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার ৭৭২টি। এসব লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৬২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটির বেশি লেনদেন হয়েছে। আর প্রতিদিন হাতবদল হয়েছে গড়ে ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭৬ কোটি টাকা। ওই মাসে ১৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকার ক্যাশ ইন, ১৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকার ক্যাশ আউট এবং ১৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি লেনদেন হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুনে ২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকার বেতন-ভাতা বিতরণ, ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকার ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, ৩ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার মার্চেন্ট পেমেন্ট, ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকার সরকারি মাশুল গ্রহণ এবং ১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার অন্যান্য লেনদেন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক বলেন, এমএফএস সেবায় প্রতিনিয়ত গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। প্রত্যেক গ্রাহকের হিসাবেই কিছু না কিছু টাকা জমা থাকে। এ কারণেই এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে ই-মানির স্থিতি বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালাও জারি করা হয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ব্যবহার করে যে ধরনের লেনদেন হয়, তাতে এত পরিমাণ অর্থ জমা থাকার কথা নয়। এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে ১০ হাজার কোটি টাকার স্থিতি থাকা মোটেই নিরাপদ নয়। সা¤প্রতিক সময়ে ই-কমার্স ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক, অর্থ লুণ্ঠন ও আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো এমএফএস প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে, দেশের আর্থিক খাত নিয়েও বড় ধরনের অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি হবে।
যদিও ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে এমএফএস প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টাকা রাখা বেশি নিরাপদ বলে মনে করছেন নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ মিশুক। তিনি বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ব্যাংক ঋণ বিতরণ করে। এক্ষেত্রে বিতরণকৃত ঋণটি খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এমএফএস প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের ঋণ দেয় না। গ্রাহকদের হিসাবে জমা থাকা অর্থ আমরা বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসাবে জমা রাখছি। ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া মুনাফার অর্থ আমরা গ্রাহকদের হিসাবে প্রতি মাসে জমা করে দিই। সরকারি বিল-বন্ডে সুদের হার খুবই কম। এজন্য নগদ ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসাবে টাকা জমা রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com