ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। গ্রেফতার ব্যক্তির নাম আল ইমরান জুয়েল (২০)। গত বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানান। গত মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে নোয়াখালী জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন টিম। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি মোবাইল সেট, ১টি ডেস্কটপ, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিক কার্ড ও শতাধিক প্রি-অ্যাকটিভেটেড সিম কার্ড জব্দ করা হয়। সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়, অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজের অনুকরণে daraz.cl নামক ভুয়া ওয়েবসাইট ও Daraz Bangladesh ফেসবুক পেজ বানিয়ে একটি চক্র বেশ কিছুদিন ধরে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রির নামে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। সিটিটিসি সূত্র আরও জানায়, বিষয়টি আন্তর্জাতিক ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবার মালিকানাধীন অনলাইন মার্কেট প্লেস দারাজ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা গত ২৩ নভেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তদন্তকালে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে daraz.com.bd এর অনুকরণে daraz.cl নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্যে ৫০-৭০% পর্যন্ত আকর্ষণীয় ছাড়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো। বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অন্যান্য ই-কমার্স সাইট থেকে ক্লোন করা ছবি। ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তারা Daraz Bangladesh নামে একটি ফেসবুক পেইজও তৈরি করেছিল। সাধারণ মানুষ এই ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজকে প্রকৃত Daraz এর মনে করে কেনাকাটা করার জন্য daraz.cl ওয়েবসাইটে দেওয়া ‘নগদ’ নাম্বারে টাকা পরিশোধ করতো। ওয়েবসাইটটি কারিগরি দিক বিবেচনায় এতটাই দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল যে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারিত হতেন। নিজেদের আড়াল করার জন্য প্রতারক চক্রটি সাধারণ গ্রাহকদের হেল্পলাইন নাম্বার হিসেবে অনলাইন টেলিফোন সার্ভিস ব্রিলিয়ান্টের একটি নাম্বার সরবরাহ করতো। এছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তারা daraz.cl ওয়েবসাইটে দাফতরিক একটি ঠিকানাও প্রদান করেছিল। সুচতুর এই গ্রুপটি অর্থ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে নকল ওয়েবসাইটে একেক সময় একেক ‘নগদ’ নাম্বার প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ করতো। এভাবে খুব অল্প সময়েই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতার জুয়েল একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার এবং সে এই চক্রের মূল হোতা ও ওয়েবসাইটটির ডিজাইনার।
ইতোপূর্বেও এই প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট যেমন walton.com, bestzone.com.bd বানিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল বলে সিটিটিসি জানায়।