বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা যে আদেশ দিয়েছেন আইনের দৃষ্টিতে তা বৈধ নয়, এটা অবৈধ। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন তা অনুধাবন করতে পারছেন। বিকেলে যথাযথ ও আইনগত আদেশ দেবেন। আশা করি বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী খালোদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিল করেছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। পরে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। আজ (শনিবার) সেই আপিল আবেদনের ওপর নির্বাচন কমিশনের আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য ছিল। প্রাথমিক শুনানি শেষে বিকেলে আদেশ দেয়া জন্য পেন্ডিং রেখেছে ইসি।
দুপুর ১টারর দিকে (১২টা ৫৮ মিনিট) দিকে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষ জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আর্টিকেল ১২/১ ঘ অনুসারে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল। আমরা শুনানিতে বলেছি, রিটার্নিং কর্মকর্তা যে কারণ দেখিয়েছেন, ওই আইন অনুসারে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল সঠিক হয়নি। কিন্তু সেটাই করা হয়েছে। আমরা সেসব কারণে আপিল করেছি।
নির্বাচন কমিশনে আমরা আইনের বিস্তারিত দিক তুলে ধরেছি। নির্বাচন কমিশন সব শুনে অন্যান্য মামলার মতো এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে তারা বিকেল ৫টার দিকে তাদের মতামত ও সিদ্ধান্ত জানাবেন -বলেন তিনি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, সাংবিধানিক অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বেগম জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো সুযোগ নাই। আইনগতভাবেই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, ১২/১ ঘ’-তে নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের কথা লেখা রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধী হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রক্রিয়া তো এখনও শুরুই হয়নি। এখনও খালেদা জিয়া মার্কা নিয়ে রাস্তায় নামেননি। তাহলে নির্বাচন-সংক্রান্ত অপরাধ করার সুযোগই তৈরি হয়নি। সুতরাং বেগম খালেদা জিয়া এমন কোনো অপরাধ করেননি যে, নির্বাচন-সংক্রান্ত বিধান দিয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়।
কমিশন কি তাদের কোনো কনফিউশনের কথা বলেছেন, যেটি আরও পর্যবেক্ষণের দরকার রয়েছে? -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, এমন কিছু তারা বলেননি। এখন প্রসেস হচ্ছে ভেরি ইনিসিয়েল স্ট্যাজ। এ অবস্থায় রিটার্নিং কর্মকর্তা কি আদেশ দিয়েছেন শুধু সেটার উপরই নির্বাচন কমিশন আদেশ দিতে পারবেন। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, ১২/১-এর ‘ঘ’ অনুসারে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। সেখানে যেসব সেকশন রয়েছে সেসব কানেক্টেড নির্বাচনী আচরণ-সংক্রান্ত।
উদাহরণ দিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, নির্বাচনের মাঠে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে যেমন- আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করলাম, নির্বাচনী প্রসেস শুরু হলো, কাউকে মারধর করলাম, কাউকে গুলি করলাম, ভোট কেন্দ্রে অরাজক অবস্থা তৈরি করে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলাম- এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিধিতে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়। এখনো সে অবস্থাই তৈরি হয়নি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সাজার প্রসঙ্গে মনোনয়নপত্র বাতিলই হয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলে নির্বাচন-সংক্রান্ত আচরণ বিধিতে। আপনারা জানেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। সেক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া কি করে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করলেন? সাজার জন্য নয়, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল রিটার্নিং কর্মকর্তা, যা সঠিক নয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন ছাড়াও ছাড়াও কায়সার কামাল, নওশাদ জমির, মাসুদ আহমেদ তালুকদার এ উপস্থিত ছিলেন।
খবরপত্র/এমআই