বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার কথা বললেও এখন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) গাজীপুর শহরের শহিদ বরকত স্টেডিয়ামে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জন করেছিলাম, সেই গণতন্ত্র, সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে দেখতে পান, ভোট দেয়া হয়ে গেছে। অথচ আমরা বলেছিলাম, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। এখন কি সেই ব্যবস্থা আছে? এখন আপনারা কি ভোট দিতে পারেন?’ কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষণের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়। আমাদের এক বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে, সেখানে তিনি ধর্ষিত হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এদেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। ব্যাংক লুট হচ্ছে, আজকে সরকার অর্থনীতির মেগা প্রজেক্ট করছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, এসব প্রকল্প থেকে সরকারের লোকজন কমিশন নিচ্ছে।
এ সময় তিনি জনতার উদ্দেশে জানতে চান চালের দাম এখন কত? তিনি বলেন, ‘৭০ টাকা। অথচ বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল দিবে, বিনামূল্যে সার দেবে, আর আজকে তিনগুণ বেশি দামে এসব কিনতে হচ্ছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে অর্জন, স্বাধীনতা আর গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য নয়। আমার দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বদলে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন।’
তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের চলমান সংলাপের সমালোচনা করে বলেন, ‘এখন চলছে সংলাপ। রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দলের নেতাদের দাওয়াত দিচ্ছেন, দাওয়াত দিয়ে বঙ্গভবনে খাওয়া-দাওয়া করাচ্ছেন। তারা নির্বাচন কমিশন গঠন করে কিন্তু নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারে না।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “কে এম নুরুল হুদাকে অনেকে বলে- বেহুদা। কোনো নির্বাচনের পরে তিনি বলেন, ‘সকল নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে’।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজিত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছিল। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, তখন তারা দেখল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, তারা ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবো না। তাই তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার লক্ষ্যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিল। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি ফজুলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিন ও জেলা বিএনপির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন সবুজের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, গাজীপর মহানগর বিএনপির আহবায়ক মো: সালাউদ্দিন সরকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতন, সহ-সংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইজুল ইসলাম টিপু, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা: মাজহারুল আলম, স্বেছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মো: মুজিবুর রহমান, ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর বারের সভাপতি অ্যাভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: হেলাল উদ্দিন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহজাহান ফকির, শ্রীপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কাজী খান, গাসিক কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নু, মহানগর বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবু তাহের মুছুল্লী, জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ভাট, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি আরিফ হোসেন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাহিন, জেলা স্বেছাসেবক দলের আহবায়ক হাসিবুর রহমান মুন্না, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান বাবুল, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
এর আগে দুপুরের আগেই শহীদ বরকত স্টেডিয়ামের সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন। গাজীপুর মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎস্যজীবী দল, কৃষক দল, মহিলা দল, শ্রমিকদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন।