আবার কড়াকড়ি বিধি-নিষেধ আসছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ বেড়ে গেলে লকডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রী বলেন, অনেকে জিজ্ঞাসা করে যে লকডাউন দেয়া হবে কি না, পাশের দেশে তো দিয়েছে। তবে আমরা সেই চিন্তা এখনো করছি না। যদি পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়, সংক্রমণ অনেক বৃদ্ধি পায়; তাহলে লকডাউনের চিন্তা মাথায় আছে। এর আগে সোমবার রাতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ ইস্যুতে ডাকা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি, সেজন্য সুপারিশও করা হয়নি। সচিবালয়ে তিনি বলেন, করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে সেটি আশঙ্কাজনক। হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২০ হাজার শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যানবাহনে মাস্ক পরা ছাড়া চলাচল করা যাবে না। চলাচল করলে জরিমানা করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও যানবাহনে অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী চলাচল করতে হবে। রেস্তোরাঁয় খেতে হলে ভ্যাকসিন কার্ড দেখাতে হবে। সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এক সপ্তাহ পরেই এ সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ মোকাবিলায় আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত আসছে। একই সঙ্গে কমছে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সময়। গতকাল মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা জানান।
এ বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আগামী সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। এর আগে ওমিক্রন মোকাবিলায় সোমবার (৩ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে নানান ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে লক্ষ্য করছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যেভাবে বাড়ছে, এটা আশঙ্কাজনক। সেই চিন্তা-ভাবনা করে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। সেই মিটিংয়ে আমি ছিলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় ছিলেন, সচিবরা, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, ডিআইজিরা যুক্ত ছিলেন। তাদের কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ফাইনাল না। ক্যাবিনেট থেকে ফাইনাল চিঠিটা যাবে সবার কাছে।’
ওই সভায় আলোচনার সূত্র ধরে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ও ওমিক্রনকে আমাদের রুখতে হবে। সেজন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। যানবাহনে মাস্ক ছাড়া চলাচল করা যাবে না। যদি কেউ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে চলাচল করে তাহলে জরিমানার মধ্যে পড়বে। এটার একটা সিদ্ধান্ত মোটামুটি হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, বাস ও অন্যান্য যানবাহনে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে মাস্ক পরে যেতে হবে। মাস্ক ছাড়া গেলে দোকানদারের জরিমানা হবে, যে যাবে তারও জরিমানা হতে পারে। দোকান-মার্কেট খোলা রাখার সময়সীমা কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাত ১০টার পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। এটাও প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে হলে টিকা দেওয়ার কার্ড দেখাতে হবে। মাস্ক পরে যেতে হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল চলবে। যদি সংক্রমণ বেশি বৃদ্ধি পায় তবে স্কুলের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে। স্কুল চালিয়ে রাখা যাবে না। এখনো সেই সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি, সেই পরিস্থিতি এখনো দেশে বিরাজ করছে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন, লকডাউন দেওয়া হবে কি না, পাশের দেশে তো দিয়েছে। আমরা সেই চিন্তা এখনো করছি না। যদি অবস্থা আওতার বাইরে যায়, সংক্রমণ অনেক বৃদ্ধি পায় তাহলে লকডাউনের চিন্তা মাথায় আছে। পাশাপাশি স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনের ক্ষেত্রে পুলিশ পাহারা বসানো হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে।’ ১৫ দিন পর এসব বিষয় বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ডিসি, এসপি যারা আছেন জেলা পর্যায়ে তাদেরকে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো তারা যখন পাবেন, যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করেন। আগে ১৫ দিনের কথা বলা হয়েছে। আজকে আমি প্রস্তাব করেছি ১৫ দিন নয়, সাতদিন করার জন্য। সেটা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন।’
‘আমরা মনে করি, ১৫ দিন লম্বা সময়, এরমধ্যে অনেক ছড়িয়ে যেতে পারে। এজন্য আমরা সাতদিন বলেছি, আশা করি সাতদিনই হবে। যেসব নির্দেশনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে নিরাপদে রাখতে চাই। দেশের অর্থনীতি ভালো থাকুক। জীবনযাত্রা স্বাভাবিকভাবে চলুক। এজন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। শুধু সরকার কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা পারবে না। ঝুঁকিপূর্ণ ও বয়স্ক ব্যক্তিরা সাবধানে থাকবেন। ওমিক্রন দু-তিনগুণ বেশি হারে সংক্রমণ করে।’ হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজকর্ম করার আহ্বান জানান।