বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে দেশজুড়ে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরমধ্যে করোনার প্রকোপ বাড়ায় সভা-সমাবেশ বন্ধসহ ১১দফা বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। যে কারণে সমাবেশের তারিখ পুনর্র্নিধারণ করে হলেও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে এবং চলবে। ইতোমধ্যে জনস্বার্থ এবং প্রাসঙ্গিক সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের চলমান সভা সমাবেশের তারিখ পুনর্নিৰ্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিএনপি ও অঙ্গ দল সমূহের সব কেন্দ্রীয়, মহানগর জেলার নেতৃবৃন্দদের পুনর্র্নিধারিত তারিখে সভা-সমাবেশ সফল করার জন্য প্রস্তুতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক দল দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে করোনার সংক্রমণ রোধে দলের পক্ষ থেকে শুধু সভা-সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যপী কোভিড়-১৯ বিস্তারের প্রথম দিকে সরকার অবহেলা এবং সরকারের মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের দায়িত্বহীন আস্ফালন দেশের জনগণকে বিপদাপন্ন এবং কোভিডের অসহায় শিকারে পরিণত করেছে। পরবর্তীতে কোভিড নিয়ন্ত্রণের ও চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও সমন্বয়হীনতা সংকটকে জটিলতর করেছে। যার ফলে হাজারো মানুষ –এমনকি স্বাস্থ্যসেবা ব্যক্তিগত অকালে মৃত্যুর শিকার হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক জনগণকে টিকার আওতায় আনার ক্ষেত্রে আমরা পাশ্ববর্তী দেশগুলো, এমনকি দরিদ্র ও যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের চেয়েও পিছিয়ে ছিলাম।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, প্রায় ২ বছরে ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কোভিডের টিকা পায়নি। সরকার তথাকথিত উন্নয়ন ও সাফল্যের যে বড়াই করে তা জনগণের কোনো উপকারে আসেনি । এমনকি এক সময়ে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী সবাই এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমন রােধে দলমত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহনে তৎপর হলেও বরাবরের মত এদেশের সরকার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা বাস্তবায়নে জনগণকে সম্পৃক্ত না করার আত্মঘাতি প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞ মহল যখন বলছেন, উম্মুক্ত স্থানের চেয়ে বদ্ধস্থানে কোভিড বেশী ছড়ায়। তখন বাংলাদেশ সরকার ১১ দফা নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করে বদ্ধস্থানে তা চালিয়ে যাওয়ার সুযােগ দিয়েছে। এই অযৌক্তিক সরকারি সিদ্ধান্ত অবশ্যই কোভিডের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে নেয়া হয়নি। বিরোধী দল সমূহের চলমান প্রতিবাদ-প্রতিরাধে আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত ও দমন করার জন্য এসব পরিকল্পনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে। হাট-বাজার, যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হচ্ছে। দোকান-পাট, শপিং মল খোলা রাখা হচ্ছে। সারাদেশে মেলার আয়োজন করা এবং মুজিব বর্ষ পালনের কর্মসূচি দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। অথচ উম্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তিপূর্ণ সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। কাজেই এই নিষেধ্বাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অগণতান্ত্রিক এবং দমনমূলক বলেই আমরা মনে করি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণকে ভালবাসি এবং জনগণের জন্য রাজনীতি করি বলেই আমরা বিভিন্ন সময়ে করোনার সংক্রমণ এবং তার অনিবার্য ক্ষতি সম্পর্কে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছি। জনগণকে সচেতন এবং ওষুধ, অক্সিজেন সরবাহ ও স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। এমনকি সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে দলীয় কর্মসূচি বন্ধ রেখে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখনও আমাদের কাছে জনস্বার্থই সবচেয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সরকার কোভিভ-১৯ এর ডেল্টা ও ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট প্রতিরােধে যতটা না আগ্রহী, তার চেয়েও বেশ আগ্রহী বিরােধী দল দমনের সুযোগ খোঁজায়। বিএনপি এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ইতােমধ্যে তার অসংখ্য প্রমাণ দেশবাসী দেখেছেন। ১১ দফা নির্দেশাবলী জারি হওয়ার আগেও আমাদেরকে দেশের বহু স্থানে সমাবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হায়রানি করা হচ্ছে। আমরা এসবের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।