ইংরেজি সাইনবোর্ডের বিরুদ্ধে চসিকের অভিযান : মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ইংরেজিতে লেখা প্রতিষ্ঠানের নাম ফলকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর উপস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার সকালে কাজীর দেউড়ি মোড়ে ইংরেজিতে লেখা একটি নাম ফলকে কালো কালি লাগিয়ে অভিযান শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমানসহ বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগের নেতৃবৃন্দ, চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মহান ভাষা আন্দোলনের এ মাসে চসিকের পক্ষ থেকে বাংলায় নাম ফলক চালু করতে যা করা প্রয়োজন সবই করা হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম বাসস’কে বলেন, নাম ফলকে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে চসিক। এ ছাড়া চসিকের ট্রেড লাইসেন্স শাখাকে সচেতন করা হয়েছে। মেয়রের নির্দেশে আজ থেকে ইংরেজি সাইনবোর্ডে কালো কালি লাগানোর অভিযান শুরু হয়েছে। কাজীর দেউড়ি মোড়ের এলিগ্যান্ট সিরামিক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইংরেজি নাম ফলক লাগানোয় আজ সকালে তাদেরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি চসিকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে ওই নাম ফলকে কালো রং লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগ নামে একটি সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে নগরীর সব নাম ফলকে বাংলাকে প্রাধান্য দেয়ার আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এ সংগঠন ইতিপূর্বে নিজেরাও নগরীর বেশ কিছু ইংরেজি সাইনবোর্ডে কালো কালি লাগানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ উদ্যোগ শুরু হওয়াকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বাংলা ভাষা প্রচলন উদ্যোগ-এর প্রধান ডা. মাহফুজুর রহমান বাসস’কে বলেন, ‘আমরা আজ থেকে নগরীর ইংরেজি সাইনবোর্ড কেটে দেয়া ও কালি লাগানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা আমাদের সর্বশেষ প্রস্তুতির কথা মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে গতকাল জানিয়েছি। সিটি কর্পোরেশনও ইতিপূর্বে জনসাধারণকে সচেতন করেছে। আজ থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করায় আমরা আমাদের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছি। তাদের উদ্যোগের অগ্রগতি দেখে এ মাস শেষে আমরা আবার মাঠে নামবো।’
ডা. মাহফুজ বলেন, ‘আমরা ইংরেজি বা অন্য ভাষার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু রক্তে অর্জিত মাতৃভাষাকে সম্মান জানাতে হবে সর্বাগ্রে। আমরা চাই এবং চসিকও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে যে, নগরীতে শতভাগ ইংরেজিতে লেখা সব সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেরতে হবে। এর পরিবর্তে সাইনবোর্ডের ওপরে ৬০ শতাংশ বাংলায় এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ অন্য যে কোনো ভাষায় লেখা যাবে। আমরা আশা করি, চসিক আন্তরিকতার সাথে এ উদ্যোগ সফল করবে।’