সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

যমুনার চরে দেশের অন্যতম বৃহৎ শুকনো মরিচের বাজার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মরিচে মরিচে লাল হয়ে গেছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চল। কৃষকের বাড়ির চালা থেকে উঠান, সবখানেই এখন চলছে মরিচ শুকানোর কাজ। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বগুড়ার সিংহভাগ মরিচ উৎপাদন হয়েছে এ চরাঞ্চলে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেবল এ চর থেকেই ১৭০ কোটি টাকার বেশি অর্থের শুকনো মরিচ কেনাবেচা হবে এ বছর।
সারিয়াকান্দি উপজেলা যমুনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর ভাঙন ও বন্যার কারণে নদী এলাকার কৃষিজমিতে প্রচুর পলি পড়ে। বন্যার পর পানি কমে গেলে নদীর বুকে বড় বড় চর জেগে ওঠে। মরিচ চাষের জন্য মূলত পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে এমন জমির প্রয়োজন। সে হিসেবে এসব চরের মাটি মরিচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে স্থানীয় চাষীরা চরে প্রচুর পরিমাণে মরিচ চাষ করেন। মূলত শংকরপুর, নিজবলাইল, কাজলা, চর ঘাঘুয়া, আওলাকান্দি, পশ্চিম চেচিবাড়ি, পূর্ব শংকরপুর, চর মাঝিরা, সারিয়াকান্দি সদরসংলগ্ন চরে মরিচের চাষ বেশি হয়।
কাঁচামরিচ বিক্রির পাশাপাশি একটা বড় অংশ মরিচ খেতেই পাকানো হয়। এরপর সেই মরিচ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় রান্নার অতিজরুরি উপাদান শুকনো মরিচ। মূলত বিপুল চাহিদার কারণেই স্থানীয় চাষীরা প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে মরিচ চাষ করেন। বগুড়ার কৃষি অফিস বলছে, চলতি বছর রবি মৌসুমে জেলার ৭ হাজার ১০০ একর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে, যা থেকে ১৮ হাজার ১৭৬ টন শুকনো মরিচ পাওয়া যাবে। পাইকারি বাজারে রবি মৌসুমের শুকনো মরিচের প্রতি কেজির দাম ১৬০-১৮০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে এর দাম ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। পাইকারি ১৮০ টাকা দর ধরে হিসাব করলে কেবল এ মৌসুমে বগুড়ায় শুকনো মরিচ থেকে আয় হবে ৩২৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এনামুল হক জানান, শুধু সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরে ১৭০ কোটি টাকার ওপরে শুকনো মরিচ কেনাবেচা হয়। এর সঙ্গে পুরো উপজেলা, ধুনট, গাবতলী, সোনাতলা উপজেলা যুক্ত হলে তা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। মরিচ সংগ্রহের জন্য দেশের নামকরা সব খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিগুলো এ অঞ্চলে ভিড় করে। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই এ অঞ্চলে নিবন্ধিত কৃষক রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন মরিচ উৎপাদনের জন্য সব ধরনের সহায়তাও দেন তারা। এখান থেকে শুকনো মরিচ কিনেই কোম্পানিগুলো তা গুঁড়ো করে প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়।
সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের খেত থেকে এরই মধ্যে পাকা মরিচ উত্তোলন শুরু করেছেন চাষীরা। এখন চলছে রোদে শুকিয়ে নেয়ার কর্মযজ্ঞ। বর্ষা শুরুর আগেই এ মরিচ শুকাতে না পারলে রঙ নষ্ট হয়ে আবেদন হারাবে। তাই যমুনার চরাঞ্চলে এখন তুমুল ব্যস্ততা। বাড়ির চালা থেকে শুরু করে উঠান কিংবা জমি, যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ কোথাও ফাঁকা নেই। দূর থেকে দেখলে মনে হবে গোটা এলাকাজুড়ে ছড়ানো রয়েছে লাল রঙের চাদর। শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শুকনো মরিচ বাছাই ও শুকানোর কাজে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এখন পর্যন্ত মরিচের ভালো উৎপাদন হয়েছে। বাজারদরও ভালো। এ বছর প্রত্যাশিত মুনাফা ঘরে তুলতে পারবেন তারা। রবি মরিচের পর এখন বর্ষাকালীন খরিপ-২ মরিচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সারিয়াকান্দি উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জানান, সাধারণত চরে মরিচ উৎপাদনে সামান্য কিছু টিএসপি ও ডিএপি সার প্রয়োজন হয়। হাইব্রিড মরিচের প্রতি কেজি বীজের দাম ৭০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি মরিচ উৎপাদনে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। এবার প্রতি বিঘা জমিতে শুকনো মরিচের ফলন হয়েছে আট-নয় মণ। পাইকারি বাজারে এখন প্রতি মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬-৮ হাজার টাকায়। এতে কৃষকের বিঘাপ্রতি লাভ থাকে ৪০ হাজার টাকা। এ কর্মকর্তা বলেন, মরিচের মান যত ভালো হবে ততই লাভবান হবেন কৃষক। এ অঞ্চলের কৃষকেরাও ভালো মানের মরিচ উৎপাদনের চেষ্টা করেন। সে কারণেই বিভিন্ন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানিগুলো এ এলাকা থেকে মরিচ সংগ্রহ করে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এনামুল হক আরো জানান, রবি মৌসুমে জেলার উৎপাদিত মরিচের সিংহভাগই আসে যমুনার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর থেকে। এ মৌসুমে জেলায় এবার ৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। কেবল শুকনো মরিচই নয়, স্থানীয় কৃষকরা এরই মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামরিচও বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে লাভের পাল্লা ভারীই থাকবে জেলার মরিচচাষীদের।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com