বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে আমদানি-রপ্তানির অংক আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পূর্ব সীমান্তের রাজ্যটিতে বাংলাদেশ থেকেই রপ্তানি হচ্ছে বেশি। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবকালে সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার আমদানি- রপ্তানির পরিমাণ ছিল যেখানে ৩৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় যেখানে ৩৮৪ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এই অংক বেড়ে হয়েছে ৭১৬ কোটি টাকা। দুই দেশের স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ, শুঁটকি, সিমেন্ট, কয়লা, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র, কাঠ ও ধাতব আসবাবপত্র, ব্যাটারি, পানীয়, ইট ভাঙার মেশিনসহ পণ্যসামগ্রী ত্রিপুরায় রপ্তানি হচ্ছে। অপরদিকে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসছে কাগজ, আদা, গম, ভুট্টা, আনারস, কাঁচা ক্ষীর, বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, ফুলঝাড়ু, সয়াবিনের বীজ, কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) চালিত মোটরগাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ।
অল ত্রিপুরা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুজিত রায় জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। তবে সেভাবে বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়ছে না। বাংলাদেশ-ত্রিপুরার মধ্যে মৈত্রী সম্পর্ক ও বাণিজ্য দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী সরকার।
এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করার মতো বেশকিছু পণ্য রয়েছে। অনুমোদন না থাকায় বর্তমানে সেগুলো পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ত্রিপুরার সাব্রুমের সঙ্গে খাগড়াছড়ির রামগড়ের সংযোগ স্থাপনকারী ফেনী নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত মৈত্রী সেতুর সূচনায় আগামীতে সব ধরনের অনুমোদন মিলবে। ত্রিপুরার হোল সেল গ্রোসারি মার্চেন্টের সম্পাদক তমাল পাল জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব জানান, দুই বছর ধরে বাণিজ্য কিছুটা কম হলেও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের তুলনায় বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ক্রমশই বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয় ছয় কোটি ৪৬ লাখ টাকার পণ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির অংক বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।
মন্ত্রী বলেন, সোনামুড়ার গোমতী নদীতে ভাসমান জেটি নির্মিত হয়েছে। এটির মাধ্যমে নৌপথে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।
আগরতলা-আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের (আইসিপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরার পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ৩০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৪ কোটি ২২ লাখ টাকায়। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫২২ কোটি ৪২ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৪৪ কোটি ৭৮ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পণ্য আমদানি করে রাজ্যটি।
অন্যদিকে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি করা হয় চার কোটি ৬০ লাখ টাকার পণ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়ায় ছয় কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৩৪ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকার পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করে ত্রিপুরা।
জানা গেছে, ত্রিপুরার বিভিন্ন জেলায় আটটি স্থল শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এগুলো হলো- আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, সিপাহীজলার শ্রীমন্তপুর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স, খোয়াই জেলার খোয়াইঘাট ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন, উত্তর ত্রিপুরা জেলার রাঘনা বাজার ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন, ঊনকোটি জেলার মনুঘাট ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়ার মুহুরীঘাট ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন। এই স্টেশনগুলোর মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে কাগজ, আদা, গম, শুঁটকি ও আনারসসহ মোট ২১টি পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আগরতলা-আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য অনুমোদন পেয়েছে ছয়টি নতুন পণ্য। এগুলো হলো- কাঁচা ক্ষীর, ভুট্টা, বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্য, ফুলঝাড়ু, সয়াবিনের বীজ, কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) চালিত মোটরগাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ। এছাড়া আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে কিছু অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যও চলছে। এ ধরনের বাণিজ্য পেঁয়াজ, চাল, চিনি ও লবণ থেকে শুরু করে শাড়ি, তৈরি পোশাক এবং গবাদি পশু পর্যন্ত বিস্তৃত।-জাগোনিউজ২৪.কম